ভাবয়তি পদার্থান্ ইতি ভাবঃ।
ভাবযুক্ত পদার্থ নিয়ে কথা, শুধু রূপটা আর তার মান পরিমাণ দিয়ে খালাস নয় আর্টিষ্ট। ছুতোরে কুঁদে দিলে লাটিমের ডৌল, কামারে পরালে তাতে আল, তাঁতি পাকিয়ে দিলে দড়া। পেশা বিভিন্ন হ’লেও এরা তিন জনেই কারিগর,—কেউ ডৌল দিতে পাকা, কেউ সূচ বেঁধাতে পাকা, কেউ সূতো জড়াতে পাকা, কিন্তু লাটিমকে বিয়ের ক’নেটির মতো অলকা-তিলকা দিয়ে সাত রঙের বরণডালাটি মাথায় সাজিয়ে ভাবযুক্ত করলে আর্টিষ্ট,—ভুল্লো তবে ছেলে। একটু বড় হ’লে ঘুড়ির সঙ্গে এই ভাবে ভাব হ’ল, আরো বড় হ’লে হ’ল ছবির সঙ্গে ভাব, পরে হ’ল রঙ্গীন কাপড়ের সঙ্গে ভাব, এই ভাবে কেউ ভাব করে ফেল্লে কবিতার সঙ্গে, কেউ বা আর কিছুর সঙ্গে। বণিকের ঘরে সুন্দর সুন্দর অলঙ্কার ধরা থাকে স্তূপাকারে—কিন্তু এতে করে বুঝতে হবে না যে বণিকের সঙ্গে অলঙ্কারগুলোর ভাব হ’য়ে গেছে। ভাবুক সে নিজে ভালবাসে সাজ, অপরকে ভালবাসে সাজাতে, ভাব হ’ল তার যেখানে যা কিছু অলঙ্কৃত এবং যা কিছু অলঙ্কারক আছে তার সঙ্গে। একজন যে সংসারের তেল-নুন চাল-ডালের ভাবনা নিয়ে বসে’ আছে কিংবা যে গট্ হ’য়ে বসে’ মস্ত আফিসের ফাইল আর হিসেবের ভাবন ভাবছে—তাদের বলতে হ’ল ভাবনাগ্রস্ত। পরকালের ভাবনা ভেবেই আকুল, হরিনামের মালা জপছি, শাস্ত্রমতে ত্রিবিধ ভাবনাই ভাবছি, কিন্তু ভাবুক নয় একেবারেই। মালাও জপছি না হরিসভাতেও যাচ্ছি না খাচ্ছি-দাচ্ছি আফিস করছি আর খাতায় মিষ্টি মিষ্টি পদাবলী গীতা ছড়া নাটক লিখছি যা শুনে লোকের ভাব লেগে যাচ্ছে, তখন আমাকে ভাবনাগ্রস্ত নয় ভাবুকই বলবে লোকে। মালি রয়েছে ফুলগাছের ভাবনা নিয়ে কিন্তু পুষ্পলতার ভাবের সে তো ভাবুক হ’ল না এতে করে’। মালাকার গাছের ভাবনা ভাবে না, অথচ সে পড়লো ভাবুকের দলে—তার ভাবনাগুলি ফুলের হার ফুলের সিঁথি ফুলের তোড়া কত কি রূপ ধরে প্রকাশ হ’ল। উকিল ভেবেচিন্তে পাকা দলীল লিখে ফেল্লে—