পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শিল্পের সচলতা ও অচলতা
৭৫

দেখা যায়। একই মূর্তিকে একটু আসবাব রং চং আসন বাহন বদলে’ রকম রকম দেবতার রূপ দেওয়া হয়ে থাকে। বায়ু আর বরুণ, জল আর বাতাস দুটো এক নয়, দুয়ের ভাষা ও ভাবনা এক হতে পারে না। এ পর্যন্ত একজন গ্রীক ভাস্কর ছাড়া আর কেউ বায়ুকে সুন্দর করে, পাথরের রেখায় ধরেছে বলে আমার জানা নেই। এ মূর্তির একটা ছাঁচ আচার্য জগদীশচন্দ্রের ওখানে দেখেছি—গ্রীকদেবীর পাথরের কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে ভূমধ্য সাগরের বাতাস খেলছে চলছে শব্দ করছে—ছবি দেখে বুঝবে না, মূর্তিটা স্বচক্ষে দেখে এসো। এই যাঁর রূপ নেই অথচ ক্রিয়া আছে কথার ভাষায় সেই বায়ুকে দেবতাকে ক্রিয়া দিয়ে রূপ দিতে চেয়ে ঋষির মন যেমনি উদ্যত হলো বুক ফুলিয়ে, বাতাসের দুর্দমনীয় গতি পৌঁছলো অমনি ভাষায়; সে কতখানি তা ঋষির ভাষার অত্যন্ত বিশ্রী তর্জমাতেও ধরা পড়ে—“রথের ন্যায় যে বায়ু বেগে ধাবিত হন তাঁহাকে আমি বর্ণন করি, বজ্রধ্বনির ন্যায় ইঁহার ধ্বনি আবার ইনি বৃক্ষসমূহ ভগ্ন করিতে আসেন, ইনি দিক্ বিদিক্ রক্তবর্ণ করিতে করিতে শূন্যপথে গমনাগমন করেন, ধরণীর ধূলি বিকীর্ণ করিতে করিতে চলিয়া যান, পর্বতাদি যে কিছু স্থির পদার্থ তাহারা বায়ুর গতিবশে কম্পমান হইতে থাকে এবং ঘোটকীরা যেমন যুদ্ধে যায় তদ্রূপ এই বায়ুর প্রতি অভিগমন করে।” যুদ্ধের ঘোড়ার গতি নিয়ে কালিদাসেরও মনের ভাষা বার হয়েছিল বর্ষা-বর্ণনে—

“সসীকরাম্ভোধরমত্তকুঞ্জরস্তড়িৎপতাকোঽশনিশব্দমদলঃ।”
সমাগতো রাজবদুদ্ধতদ্যুতি র্ঘনাগমঃ কামিজনপ্রিয়ঃ প্রিয়ে॥

এই মনের উদ্দামগতি বাংলা ভাষাকেও তেজে চালিয়ে নিলে—

“ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে,
জলসিঞ্চিত ক্ষিতিসৌরভ-রভসে,
ঘনগৌরবে নবযৌবনা বরষা,
শ্যামগম্ভীর সরসা॥”

সারথির মানস রাশের মধ্য দিয়ে যেমন ঘোড়াতে গিয়ে পৌঁছয় তেমনি মনের ভাবনার সামান্য ইঙ্গিতও ভাষার মধ্যে দিয়ে চলাচল করে, তা সে ছবির ভাষা কবির ভাষা বা অভিনেতার কি গায়কের বা নর্তকের