পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিখতে শিখেছিল। কিছুদিন এ দিয়েই বেশ কাজ চলতে থাকে, কিন্তু এই পদ্ধতিকে অবলম্বন করে মানুষ বেশিদিন খুশি থাকতে পারে নি। এই উপায়ে সে তার মনের সব কথা সম্পূর্ণভাবে ব্যক্ত করতে না পারায় এর চেয়ে সহজ এবং উন্নত পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা করে । এই চেষ্টার ফলে প্রতীকের সাহায্যে লেখা আরম্ভ হয় । কতকগুলি নিত্যপ্রয়োজনীয় ও প্রত্যেক মানুষের ব্যবহারের সামগ্রী, যথা—তীর, কোদাল, লাঙ্গল প্রভৃতির প্রতীক কাজে লাগে ; যেমন খনন- ' কাৰ্য্য বোঝাতে কোদালের চিত্র ব্যবহার শুরু হয় । প্রতীক সাহায্যে ভাব প্রকাশের অনেকটা সুবিধা হয়েছিল। যেমন, হরিণ শীকার করা বোঝাবার জন্ত হরিণের গাধে একটা তীর একে দিলেই কাজ হয়ে যায়। এই জাতীয় চিত্ৰ-লিপি বিশেষ ভাবে প্রসারিত এবং পরিণত করেই চীন দেশে লেখার কাজ এখনও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। সেখানে দরজা বন্ধ আছে’, ০‘বাগানে ফুল ফুটেছে’, অথবা "স্থর্য উঠেছে’, কেবল একটি চিত্র-রেখায় লেখা যায় । এই প্রতীক চিত্ৰ-লিপির গৌণ ফল আরও অনেক দূর-ই এগিয়েছিল। এই পদ্ধতি থেকেই মানুষের মনে বর্ণমালা স্বষ্টি করার ধারণা জন্মায়। প্রতীক-চিত্রের সাহায্যে কার্য বুঝান যায়, তখন প্রতীকদ্বারা শব্দও তো বোঝান সম্ভব, এই বিশ্বাস মানুষের মনে উদয় হয় । এই বিশ্বাসবশে বহুদিনের বহু পরিশ্রম এবং ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে আমাদের বর্ণমালার উৎপত্তি হযেছে । খ্ৰীষ্ট পূর্ব তৃতীয় শতকে ভারত-সম্রাট ধর্মপ্রাণ মহারাজ অশোক বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রচারের জন্য বুদ্ধদেবের কতকগুলি বাণী ও নির্দেশ নানা স্থানের পাহাড়ের গায়ে লিখিয়েছিলেন । সেগুলি আজও সেই অবস্থায় আছে এবং জনসাধারণের কাছে অশোকের স্মৃতি আর বৌদ্ধধৰ্ম্মের পরিচয় অমর করে রেখেছে। অশোক যে কি লিখিয়েছিলেন তা অনেকদিন পর্যন্ত জানা যায় নি, কারণ সেখানে যে লিপি ব্যবহৃত হয়েছিল সেগুলিকে কেউ চিনতেন না । খ্ৰীষ্টীঘ ১৮৩৭ সালে জেমস প্রিন্সেপ, নামে একজন ইংরাজ এই অশোক-অনুশাসনগুলির পাঠোদ্ধার করেন। তখন জানা যায় যে ওগুলি ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা হয়েছিল এবং যেহেতু এই অনুশাসনগুলির পূৰ্ব্বেকার কোনও লেখার নিদর্শন এখনও পাওয়া যায়নি, সুতরাং, ব্রাহ্মীকেই ভারতবর্যের প্রাচীনতম বর্ণমালা বলে ধরা হয়েছে । এই ব্রাহ্মীলিপি-ই ভারতীয় বর্ণমালাসমূহের মধ্যে অধিকাংশের মাতৃস্থানীয়া, এবং আমাদের বাঙলা লিপিও এই ব্রাহ্মী থেকেই এসেছে। ব্রাহ্মীলিপির উৎপত্তি সম্বন্ধে দু'রকম মত আছে—(১) ফিনীশিয়া দেশের লিপির ছাচে ভারতীয় পণ্ডিতগণ এই লিপি গঠন করেন। } 8