পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহাদের সহিত মিশাইয়া নুতন দেবদেবীর স্বষ্টি করা হয়। আমরা ইহাদের লৌকিক দেবদেবী নামে অভিহিত করিয়াছি এবং তঁহাদের প্রতি ভক্তিকে লৌকিক ধর্ম নামে পরিচিত করিতেছি। এই সকল দেবদেবীগণের মধ্যে ধর্মঠাকুর এবং চণ্ডীদেবীর নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ করা যায়। বলা বাহুল্য, এই মঙ্গল দেবদেবী আর্যপ্রভাব পূর্ববর্তী বাঙলার দেবদেবী। মঙ্গল-কাব্যের এইরূপ ইতিহাস সম্ভবপর হইলেও ইহা আপনার পথে আপনি চলিয়াছে। প্রায় সকল দেবদেবীর কোন না কোন ভক্ত আছেন, যিনি এই শ্রেণীর কাব্য রচনা করিয়া নিজ দেবতার মাহাত্ম্য কীর্তন করিয়াছেন। তাই মঙ্গল কাব্যই বাঙলা সাহিত্যের সর্বাপেক্ষ ব্যাপক এবং বৃহত্তম কাব্য-শাখা । মঙ্গল-কাব্য সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা করিয়া আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইতেছি যে, মঙ্গল-কাব্য বলিতে কাব্য রচনার একটি রীতিবিশেষকে বুঝায়। পুরাণের ন্যায় ইহারও সম্ভবতঃ পাচটি লক্ষণ ছিল বলিয়াই ইহাকে পাচলিও বলা হয়। এই লক্ষণগুলি সম্বন্ধে আমরা বর্তমানে যাহা অনুমান করিতেছি, সেগুলি পর্যালোচনা করিলে সহজেই মনে হয় যে মধ্যযুগে বাঙলা ভাষায় যে-কোনও কাব্য রচিত হইয়াছে তাহাকেই আমরা এই মঙ্গল-কাব্যের পর্যায়ে ফেলিতে পারি। রামায়ণে শ্রীরামচন্দ্রের মাহাত্ম্য প্রচার করা হইয়াছে ; রাবণের ভাগ্য বিপর্যয়ে ভগবানের শক্তি প্রকট হইয়াছে ; তাই মনে হয় যে রামায়ণকে আমরা অবাধে শ্রীরামমঙ্গল বলিতে পারি। এই হিসাবে ধরিলে বৈষ্ণব-পদাবলীকেও বাদ দেওয়া শক্ত হইয়া পড়ে। পদাবলীর এক একটি পদ একটি কাহিনীরই অংশ বিশেষ ; পৃথক অপেক্ষ ইহাদের সমগ্রভাবে ধরিতে হইবে । কাজেই, পদাবলীকে সমগ্রভাবে গ্রহণ করিলে ইহার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের আত্ম-প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এবং রাধার ভাগ্যবিপর্যয়ের কাহিনীই সেখানে বণিত দেখিতে পাওয়া যায়। অতএব ইহার মধ্যেও মঙ্গল-কাব্যের মূল স্বত্র বর্তমান থাকার কোনই বাধা দেখি না। বস্তুতঃ জয়দেব তাহার শ্রণীতগোবিন্দম্-কে স্বয়ং “মঙ্গলমূ-উজ্জল-গীতি” বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন । তাই আমরা ইহার মধ্যে মঙ্গল এবং গীতি কাব্যের প্রথম অস্কুর পাইতেছি । মঙ্গল-কাব্য যে কাব্য-রচনার একটি বিশেষ রীতি বা ঢঙরূপেই বিবেচিত হইত তাহার প্রমাণ স্বরূপ বলা ষায় যে, সকল ধর্ম সম্প্রদায়ই নিজ নিজ দেবতার মাহাত্ম্য -প্রচার করিবার জন্য মঙ্গল-কাব্য রচনা করিত। বৈষ্ণব দিগের কথা ধরা যাৰ । পদাবলীতে যেমন মঙ্গল-কাব্যের আভাস পাওয়া যাইতেছে, তেমনি কিন্তু সম্পূর্ণাঙ্গ

  • g