পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করিতে শরীরের মাংস কাটিয়া হোম করিতেছেন । কিন্তু ধর্ম প্রসন্ন হইলেন না দেখিয়া শাস্কুলার পরামর্শে লাউসেন নিজ মস্তক কাটিয়া অগ্নিতে দিলেন। তখন ধর্ম প্রসন্ন হইয় তাহার জীবন দান করিলেন এবং পশ্চিমে সূর্য্যোদয় করাইলেন । লাউসেন হরিহর বাইতিকে সাক্ষী রাখিয়া গৌড়ে আসিলেন। মহামদ প্রলোভন দেখাইয় হরিহরকে বশীভুত করার চেষ্টা করিল ; কিন্তু ধর্মের ভয়ে হরিহর রাজ সভায় সত্য সাক্ষই দিল। মান্ত পিতা ও ভ্রাতার সহিত লাউসেন দেশে ফিরিলেন। ধর্মের কৃপায় কলিঙ্গা, কালু, প্রভৃতি জীবন পাইল । এদিকে মহামদ চুরির অপবাদে বাইতিকে শূলে দিল। কিন্তু ধর্মের কৃপায় বাইতি সশরীরে স্বর্গে গেল। মহামদের অশেষ পাপের জন্য তাহার কুষ্ঠ হইল । লাউসেন ধর্মের কৃপায় তাহার রোগ সারাইয়া দিলেন ; কিন্তু তাহার দুষ্কর্মের জন্য মুখে একটি চিহ্ন রহিয়া গেল। এইভাবে মর্ত্যে ধর্মঠাকুরের পূজা প্রচার করিয়া লাউসেন সপরিবারে স্বর্গে গেলেন । চিত্ৰসেন ময়নায় রাজত্ব করিতে লগিলেন । পরবর্তী কবিগণ র্যাহাকে আদি কবির সম্মানিত আসন দিয়াছেন, ময়ূরভট্টকেই ধর্মমঙ্গল-শাখার প্রথম কবি বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে। ইহার গ্রন্থের নাম ছিল ছাঁকন্দ পুৰণি । বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ হইতে ময়ুবভট্টের যে গ্রন্থ প্রকাশিত হইয়াছে, উহাকে নানাবিধ কারণে আধুনিক বলিয়াই মনে হয়। কাজেই উহা ময়ূরভট্ট-রচিত আদি গ্রন্থ নহে। এই জন্য কবির আবির্ভাব-কাল অজ্ঞাত রহিয়াছে । ময়ূরভট্টের পরবর্তী যে সকল কবির গ্রন্থ পাওয়া গিয়াছে, তাহীদের মধ্যে খেলারাম অন্যতম। অন্যান্ত কবিদের মত ইনি আত্ম পরিচয দেন নাই বলিয়া আমরা সে সম্বন্ধে কিছুই জানিতে পারি না। তবে রচনা কাল ১৪৪২ শকান্ধ—১৫২৮ খ্ৰীষ্টাব্দ জানা গিয়াছে। বীরভূমের বোলপুরে স্যাম পণ্ডিত নামক এক ব্যক্তি একখানি ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনা করিয়াছিলেন। কবির কাব্যের যে সামান্য পরিচয় পাওয়া গিয়াছে তাহ বৈশিষ্টবর্জিত বলিলেই চলে । রূপরাম তাহার কাব্যে পাণ্ডিত্যই বেশী দেখাইয়াছেন, কাব্যে সরসতা থাকিলেও সরলতার একান্ত অভাব। রূপরাম বর্ধমান জেলার অধিবাসী ইহা যেমন সুনিশ্চিত, তাহার রচনাকালও তেমনই অনিশ্চিত। শ্রযুক্ত যোগেশচন্দ্র রায় মহাশয়ের অনুমানে ইনি ১৬০৪–০৫ খ্ৰীষ্টাব্দে গ্রন্থ রচনা করেন। বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস গ্রামের কবি সীতারাম ধর্মমঙ্গলের অন্ততম কবি। গ্রন্থ 3