পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙলা দেশ জাতির পরিচয় তার ইতিহাস আর সাহিত্যে । ইতিহাস দেয় তার কৰ্ম্মময় জীবনের বিবরণ, আর সাহিত্য দেয় তার মানসিক সাধনার রসময় রূপ। ইতিহাস দেয় তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার যথাযথ পরিচয়, আর সাহিত্য দেয় তার ধ্যানালোকে উদ্ভাসিত সত্যের পরিচয় । সুতরাং কোন জাতিকে জানিতে তার ইতিহাস আর সাহিত্যের পরিচয় জানা অপরিহার্য্য। মানুষের কৰ্ম্মময় জীবন গড়িয়া তুলে তার পারিপাশ্বিক। বাইরের প্রকৃতি আর চারিপাশের অবস্থা মানুষের কৰ্ম্মকে একটা নির্দিষ্ট ধারায প্রবাহিত করায় । এই পারিপাশ্বিকের প্রভাব মানুষের অন্তরেও বিস্তার করে, তার চিন্তাধাবা, তার ধ্যান-ধারণা, তার মনের আধ্যাত্মিক বিকাশ বহুলাংশে নির্ভর করে তার পারিপাশ্বিকের উপর । তাই, ইতিহাস ও সাহিত্য পরস্পরের পরিপূরক ; কখনও ইতিহাস সৃষ্টি করে সাহিত্য, কখনও সাহিত্য স্বষ্টি করে ইতিহাস । ইতিহাসের এক-একটি যুগান্তর প্রেরণা জোগায় সাহিত্য স্থষ্টির, আবার সাহিত্য স্বষ্টি করে যুগান্তরের। জাতির ইতিহাস আর সাহিত্য যখন এরূপ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তখন কোনও জাতিকে বুঝিতে হইলে তার ইতিহাসের সঙ্গে তার সাহিত্যকে অনুধাবন করিতে হইবে । তাই বাঙলা সাহিত্যের বিচার ইতিহাসের পটভূমিতে না করিলে তাহা কোন ক্রমেই সার্থক হইবে না । ভারতের তথা বাঙলার জাতিতত্ত্ব আর ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন জাতির মিশ্রণ ভারতীয় ভাষাগুলিকে এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে বৈচিত্র্য দিয়াছে, এই বৈচিত্র্য অনুধাবন করিত হইলে আগে মিশ্রণের পরিচয় লইতে হইবে । জাতিতত্ব আলোচনার ভিত্তি নৃতত্ববিদ্যা। ভারতীয় জাতিসমূহের আলোচনা প্রসঙ্গে বাঙালী জাতির উৎপত্তি সম্বন্ধে ধারণা করিতে হইলে আমাদের নৃতত্ত্ববিদ্যার আশ্রয় লইতে হইবে । একশ্রেণীর নৃতত্ত্ববিদ বিশ্বাস করেন যে একটা প্রচণ্ড ভূমিকম্পের ফলে ভারতের ভূ-পৃষ্ঠের অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটে এবং সমুদ্র হইতে হিমালয় পৰ্ব্বত মাথ৷ তুলিয়া দাড়ায়। যে সকল চতুষ্পদ জন্তু সে সময়ে ভারতে বাস করিত তাহার তখন খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহের জন্য সম্মুখের পা দুইটকে হাতের মত ব্যবহার করিতে থাকে এবং কালক্রমে দ্বিপদ প্রাণীতে পরিণত হয় । এই দ্বিপদ প্রাণীই মানুষের S. রত্ব ৬—১