পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাঠঠোক্‌রা
৮৭

 এক এক জাতীয় পাখী এক এক প্রকার কীট ধ্বংস করে। আবাবিল, বাঁশপাতি প্রভৃতি উড্ডীয়মান কীট পতঙ্গ শিকার করে। ফিঙ্গেও বেশীর ভাগ তাই করে, তবে সে ভূচর কীটও ছাড়িয়া দেয় না। শালিক, হুপো, নীলকণ্ঠ, দোয়েল—এরা ভূপৃষ্ঠে-বিচরণ-কারী ষট্‌পদী কীটাদি দ্বারা জীবনধারণ করে। কাঠ্‌ঠোকরা কেবল বৃক্ষাদিতে, গাছের ত্বকের অভ্যন্তরে যে সব কীট থাকে তাহাই খায়। এই সব কীট টানিয়া বাহির করিয়া ধ্বংস করিবার জন্যই যেন বিশ্বকর্ম্মার কারখানায় ফরমাইস দিয়া বিধাতা এর অবয়ব গঠিত করিয়াছেন।

 ইহাদের জিহ্বাটি দীর্ঘ, লিক্‌লিকে এবং আঠাযুক্ত। উহার অগ্রভাগ আবার করাতের মত কণ্টকিত। গাছের বাকলের ভিতরে বা কোনও সরু গর্ত্তমধ্যে কীট আসিলে এর জিহ্বাটি তন্মধ্যে প্রবেশ করাইয়া দেয় এবং জিহ্বার আঠায় কীটটি জড়াইয়া গিয়া একটানে পাখীর মুখগহ্বরে আসিয়া উপস্থিত হয়। যখন কোনও কীট তাহার জিহ্বার নাগালেরও বাহিরে থাকে, তখন বৃক্ষকাণ্ডের উপরিভাগে চঞ্চুটির দ্বারা সবলে আঘাত করে। গর্ত্তমধ্যস্থ কীট ভয় পাইয়া বাহিরে আসিতে চেষ্টা করা মাত্র কাঠঠোক্‌রার “জিহ্বায়ত্ত” হয়। পিঁপড়ে, উই ও ঘুন জাতীয় যে সমস্ত কীট কাঠ নষ্ট করে তাহদের বিলোপ সাধন করিয়া কাঠঠোক্‌রা মানুষের উদ্ভীদসম্পদ রক্ষা করিতে সাহায্য করে। সুতরাং মানুষের কাছে ইহাদের একটা বিরাট অর্থনৈতিক মূল্য আছে।

 খাদ্য অন্বেষণ করিবার সময় পদদ্বয় যথাসম্ভব ফাঁক করিয়া তীক্ষ্ণ নখদ্বারা বৃক্ষগাত্র আঁকড়াইয়া ধরে এবং সুদৃঢ় হ্রস্ব লেজটি গাছের গায়ে লাঠিতে ভর দিবার মত চাপিয়া ধরে। তাহার পর দীর্ঘ গ্রীবাটি পশ্চাৎদিকে যথাসম্ভব লইয়া গিয়া সম্মুখভাগে সজোরে হাতুড়ীর মত চালিত করে। সুদৃঢ় চঞ্চুর আঘাতে যে শব্দটি উত্থিত হয় তাহা বেশ উচ্চ। এই উচ্চ ঠক্ ঠক্ ধ্বনি বাংলার পল্লীকাননে দিনের বেলা প্রায়ই শ্রুত হয়।