পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাঠঠোকরা
৮৯

উড়িয়া বেড়ায় বলিয়া, খুব বেশীদূর একটানা উড়িয়া যাইবার ক্ষমতা বিধাতা ইহাদিগকে দেন নাই। উড়িবার সময় ডানা দুইটি এত দ্রুত সঞ্চালিত হয় যে তাহার ফরফর ধ্বনি বেশ স্পষ্ট শুনা যায়। খানিকটা উড়িয়াই ইহাদিগকে নিম্নাভিমুখে যাইতে হয়, কেন না গাছের মূলদেশের দিকই ইহাদের গন্তব্য স্থান। সুতরাং পক্ষদ্বয় খুব দ্রুত কয়েকবার বিধূনিত করিয়া গুটাইয়া লইয়া শূন্যপথে যেন সে ডুব দেয়। একটু অপেক্ষাকৃত দূরে যাইতে হইলেও সে সোজা উড়িয়া যায় না, খানিকটা সোজা উড়িয়া পাখা গুটাইয়া একবার “ডাইভ” করিয়া আবার ডানা মেলিয়া ঊর্দ্ধদিকে নিজেকে উৎক্ষিপ্ত করে। এইরূপে উঠিয়া পড়িয়া অগ্রসর হওয়া ইহার স্বভাব। ডানার উপরে ইহাদের গতি খুব স্বচ্ছন্দ বলিয়া বোধ হয় না, মনে হয় যেন উড়িতে ইহাদের কষ্ট বোধ হইতেছে।

 পাখীরা সচরাচর যেভাবে শাখার উপর উপবেশন করে ইহারা সেরূপ করেনা। অন্যান্য পাখী শাখার উপর আড়াআড়ি ভাবে বসে। ইহার লম্বালম্বী ভাবে শাখাটিকে আঁকড়াইয়া ধরে, উপবেশন করে বলিলে ভুল হইবে। কোনও ডালের নিম্নভাগে ঐরূপে আঁকড়াইয়া বেশ অবলীলাক্রমে ডাল বাহিয়া মাথার দিকে বা লেজের দিকে দুইদিকেই বেশ দ্রুতগতিতে চলিতে পারে।

 ইহারা আত্মগোপনপ্রয়াসী পাখী নহে। ইহাদের খাদ্য অন্বেষণের ধারা ও উজ্জ্বল বর্ণ সে পথে মস্ত বাধা। সেইজন্য ইহাদের কণ্ঠে বিধাতা তীব্র ধ্বনি দান করিয়াছেন। ইহাদের কণ্ঠধ্বনিতে উদারা হইতে তারা পর্য্যন্ত সব পর্দ্দাই ধ্বনিত হয়। মাছরাঙার ধ্বনির সঙ্গে ইহাদের কণ্ঠধ্বনির সাদৃশ্য আছে। তবে ইহাদের স্বর আরও উচ্চ, তীব্র ও কর্কশ, কাণে আসিয়া যেন বিঁধে। উড়িতে উড়িতে চিৎকার করাই ইহাদের অভ্যাস। ইহাদের ডাককে হ্রেষা রব বলিলেই সঙ্গত হয়। গাছে উপবেশন করিয়া ইহারা ডাকে না।