বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯৮
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

করিত। ইহাদের ডানা দুইটি যদি শক্তিশালী না হইত তবে বহুশত যোজনপথ অতিক্রম করা সহজ হইত না।

 শরৎ কালের শেষ হইতে পাঠক পাঠিকাকে লক্ষ্য রাখিতে অনুরোধ করি। হঠাৎ একদিন আপনার বাড়ীর পাশের মাঠে বা পুকুরের ধারে কিংবা জলাশয়তীরে এই ছোট্ট পাখীটি দেখিবেন পুচ্ছ আন্দোলিত করিয়া আপনাকে অভিনন্দন করিতেছে; বলিতেছে—“এ দেশ লেগেছে ভাল নয়নে”। তখন তাহাকে দেখিয়া বুঝিতেও পারিবেন না, যে সেইরাত্রিতে বহুশত যোজন পথ অতিক্রম করিয়া আপনার গ্রামপ্রান্তে আসিয়া পৌঁছিয়াছে এবং সেইখানেই থাকিতে কৃতনিশ্চয় হইয়াছে। তাহার চলনে, ভঙ্গীতে, ইঙ্গিতে কোথাও ক্লান্তি বা অবসাদের লক্ষণ মাত্র নাই। ইহার মৃদু, মিহি সুরটি বড় মিষ্ট। অর্থাৎ সব দিক দিয়া বিচার করিলে ইহার মত হর্ষ ও আনন্দের প্রতীক জীব খুব কমই দেখা যাইবে।

 ঠিক যখন খঞ্জন আসিয়া পৌঁছায় প্রায় একই সময়ে “বাঁশপাতি”ও এদেশে পৌঁছায়। ইহারা জানাইয়া দেয় হিম আসিতেছে, সাবধান হও। আবার যদি লক্ষ্য রাখেন, দেখিবেন ইহাদের প্রত্যাগমনের তারিখটা প্রায় প্রতি বৎসর একই সময় হইয়া থাকে। দুই একদিনের পার্থক্য হইতে পারে। সেটা তিথি ও নক্ষত্রের অগ্রপশ্চাৎ হওয়ার জন্য, মাস বা পক্ষের ব্যতিক্রম হয় না।

 খঞ্জনের রূপবর্ণনা করা একটু শক্ত। ইহাদের দেহে সাদা ও কালোরঙের বিচিত্র সমাবেশই বেশী। তবে দেহের অধোভাগে একটু হলুদের ছোপ আছে। তাও আবার সকলের নহে। সাদা কালোর সংস্থান অনবরত পরিবর্ত্তিত হইতেছে। পালকগুলি অহরহ ক্ষয় প্রাপ্ত হয় সুতরাং হয়তো পালকের অগ্রভাগ একসময় সাদা দেখা গেল। কিছুদিন পরে ঐ সাদা অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হইয়া তাহার অব্যবহিত পরের কালো, অংশ পালকের অগ্রভাগের বর্ণ রূপে দেখা দিল।