বুলবুল বাংলাদেশের তথা সারা ভারতবর্ষের একটি অতি সাধারণ সুপরিচিত পাখী। সহরে, নগরে, পল্লীতে—সর্ব্বত্র একে দেখিতে পাওয়া যায়। দোয়েলের মত ইহাদের কণ্ঠস্বর লহরীর উপর লহরী, পর্দ্দার উপর পর্দ্দা ওঠে না বটে, সুমিষ্ট দীর্ঘ শীষও এদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় না। কিন্তু যে দুই তিনটি হ্রস্ব স্বর ইহারা সারাদিন, অবিরাম উচ্চারণ করে তাহা লঘু, সুমিষ্ট ও সুশ্রাব্য।
পারস্যের কবিরা যে গুলচুমী বুলবুলের কণ্ঠলালিত্যে বিমোহিত হইয়া তাহাকে সাহিত্যে অমর করিয়া গিয়াছেন—তাহার সহিত আমাদের অতি-পরিচিত বুলবুলের আদৌ কোনও সম্বন্ধ নাই—নামটা ছাড়া। পারস্যের বুলবুলকে অনেকে “বুলবুল-এ-বোস্তাঁ” বলেন। এই “বুলবুল-এ-বোস্তাঁ” ইংরেজ কবিদের স্কাই-লার্ক বা নাইটিঙ্গেল। এই পাখী ভারতের অধিবাসী না হইলেও শীতকালে পাঞ্জাব প্রদেশে চেঞ্জে আসিয়া থাকে। পাঞ্জাবের পূবদিকে বা দক্ষিণদিকে সে আর অগ্রসর হয় না—গরম দেশকে সে পছন্দ করে না। এই স্কাইলার্ক বা “বুলবুল-এ-বোস্তা”র জ্ঞাতি অবশ্য আমাদের দেশে অর্থাৎ ভারতবর্ষে আছে। তাহার নাম “ভরত”—শ্রীযুক্ত সত্যচরণ লাহা মহাশয়ের মতে সংস্কৃত সাহিত্যের “ভরদ্বাজ-পক্ষী”। তবে “ভরত” পাখীকে ঠিক বাঙ্গালী পাখী বলা চলে না। ইহা একেবারে “মেড়ো”। হয়তো বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরের পশ্চিম সীমান্তে দেখা যাইতে পারে। আমাদের বুলবুলকে “গায়ক” পাখী বলা চলে না। সুতরাং যে সব বাঙ্গালী কবিদের গজল গানে বুলবুল পাখী চুলবুল করে তাঁহাদের প্রকৃতি-পরিচয় একটু ধোঁয়াটে রকমের স্বীকার করিতেই হইবে।