পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বুলবুল
১৭

বুলবুল কিংবা সিপাহী বুলবুল বলা হয়। এর মাথার দীর্ঘ রোমগুলি খাড়া হইয়া মাথায় কিরীটের মত শোভা পায়। ইহার দুই গণ্ডের দুইপাশের একটু স্থান উজ্জ্বল রক্তবর্ণ এবং কাণপট্টির আশপাশ শুভ্র। কালো বুলবুল অপেক্ষা ইহাদের গড়ন একটু ছিপছিপে। কালো বুলবুল অপেক্ষা ক্ষিপ্রতা, চঞ্চলতা ইহাদের বেশী। চেহারার মধ্যে বেশ একটা ডোণ্টকেয়ার ভাব থাকার জন্য এর “সিপাহী বুলবুল” নাম সার্থক হইয়া থাকিলেও—ইহার মেজাজ কালো বুলবুলের মত উগ্র নহে।

 এই উভয়বিধ বুলবুলই আমাদের পল্লীঅঞ্চলে একই স্থানে বিচরণ করে। দুই জাতীয় পাখীর মধ্যে কলহ বিবাদ লক্ষ্য করা যায় না। একই জাতীয় পাখীরাও নির্ব্বিবাদে বাস করে। পরস্পরের মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠতা দেখা যায় না বটে, কিন্তু ঝগড়াঝাঁটিও দেখা যায় না। বৈশাখ হইতে এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে প্রায় ভাদ্র আশ্বিন পর্য্যন্ত। কেননা এই সময়টা ইহারা গৃহস্থালী করে। কিন্তু তাই বলিয়া এ সময়েও দোয়েলের মত বাগানের মধ্যে নিজ নিজ বিচরণ ক্ষেত্র ভাগ করিয়া নেয় না। অন্য ঋতুতে ইহারা যে দল বাঁধিয়া একটি নিবাসবৃক্ষে অনেকগুলি পাখী রাত্রি যাপন করে তাহা আমি দেখিয়াছি। গয়া সহরে একদিন শেরঘাটির রাস্তা ধরিয়া পাঁচ ছয় মাইল পদব্রজে ভ্রমণান্তে ফিরিবার সময় সূর্য্যাস্ত হইয়া গেল। পথপার্শ্বে এক স্থানে নাতিবৃহৎ বৃক্ষে ঝাঁকে ঝাঁকে কালো বুলবুল কলরব করিতেছে দেখিলাম। আমি কিছুক্ষণ তাহাদিগকে লক্ষ্য করিলাম। নিশাযাপনের পূর্ব্বে নিজ নিজ স্থান লইয়া অনেক পাখীই অনেকক্ষণ ধরিয়া কলহ, বিতণ্ডা এমন কি নখর-দ্বন্দ্ব করিয়া থাকে। ইহারাও তাহাই করিতেছিল। প্রায় এক ঘণ্টা এইরূপ করিবার পর যখন অস্তরবির প্রতিফলিত আলোকটুকুও নিভিয়া গিয়া নৈশ অন্ধকারের সূচনা হইল, তখন সকলেই চুপ করিয়া