বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বুলবুল
১৯

নিদ্রার সাধনায় রত হইল। যতক্ষণ আলোক থাকে ততক্ষণই এইরূপ গণ্ডগোল চলে। শালিক চড়ুই প্রভৃতি পাখীও নিশারম্ভে এক বৃক্ষে জড় হইয়া এইরূপ জটলা ও চিৎকার করিয়া থাকে। সুতরাং বুলবুল পাখীকে আমি ‘অসামাজিক’ পাখী বলিতে পারি না। “ফনা অফ বৃটিশ ইণ্ডিয়া” পুস্তকমালার পাখী-সম্বন্ধীয় খণ্ডগুলির মধ্যে ইহার সম্পাদক লিখিয়াছেন—“দে আর নট গ্রিগেরিয়াস ইন দি ট্রু সেন্স অফ দি ওয়ার্ড”। হইতে পারে ইহারা একটু রগচটা—সামান্য কারণে যুদ্ধং দেহি বলিয়া দাঁড়ায়। কিন্তু গ্রিগেরিয়াস নহে, একথা মানিতে পারি না। অবশ্য শালিক ও ছাতারে পাখীরা সব সময়েই দলে চলাফেরা করে, আহার অন্বেষণ করে—সুতরাং তাহারা “গ্রিগেরিয়াস ইন দি ট্রু সেন্স অফ দি ওয়ার্ড”। কিন্তু তাহাদের মধ্যেও পরস্পর মারামারি কম হয় না।

 নিদাঘকালে এরা সন্তান-উৎপাদন করে। গাছের অপেক্ষাকৃত ছোট সরু ডালের মধ্যে বাটির মত বাসা নির্মাণ করে। একবার এক জোড়া সিপাহী বুলবুল আমার বাড়ীর মধ্যে উঠানের দিকে বারান্দার সিঁড়ির ধারে ছোট একটি ক্রোটন বৃক্ষে বাসা করে। ডিম পাড়িবার পর একটি বিড়ালের উৎপাতে বাসাটি নষ্ট হয়। পুনরায় সেই খানেই বাসা নির্ম্মাণের চেষ্টা করিয়াছিল। কিন্তু গৃহের বালক বালিকাদের নজরটা একটু অধিক হইয়া পড়ায় সেস্থান পরিত্যাগ করে। এক একটা প্রজনন-ঋতুতে অন্ততঃপক্ষে চারবার ডিম পাড়ে। প্রকৃতির ব্যবস্থায় সববারেই ইহারা বাচ্চা বাহির করিতে সফলকাম হয় না। কোনও বার ডিম অনুর্ব্বর হয়। কখনও বা সাপ, নেউল কিংবা অন্য পাখী শাবক খাইয়া ফেলে। উভয় জাতীয় বুলবুলই একই রকম ডিম পাড়ে। উহার খোলার রং গোলাপী বা লালচে—তার উপর—অসংখ্য লাল বা বাদামী দাগ থাকে।