পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৮
বাঙ্গালার ইতিহাস।

আহার্য্য সামগ্রী তুলিয়া মুখে দিবেন না[১]। হৰ্ষবর্দ্ধনের রাজ্যাভিষেকের সঙ্গে শশাঙ্কের বিরুদ্ধে বৌদ্ধধর্ম্মাবলম্বিগণের ষড়্‌যন্ত্র আরম্ভ হইয়াছিল। হর্ষবর্দ্ধন শশাঙ্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রাকালে কামরূপরাজপুত্র ভাস্করবর্ম্মা কর্ত্তৃক প্রেরিত হংসবেগ নামক জনৈক দূতের সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন। ভাস্করবর্ম্মা হর্ষের সহিত সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হইবার জন্য বহুমূল্য উপঢৌকনের সহিত হংসবেগকে প্রেরণ করিয়াছিলেন[২]। হর্ষের রাজ্যের প্রারম্ভে স্থাণ্বীশ্বর-রাজগণের এমন কোন আকর্ষণী শক্তি ছিল না যদ্দ্বারা আকৃষ্ট হইয়া কামরূপরাজগণ ভারতের অন্য প্রান্তে অবস্থিত স্থাণ্বীশ্বররাজ্যের সহিত সন্ধি-বন্ধনের জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছিলেন। এই ভাস্করবর্ম্মা পরবর্ত্তিকালে অন্ততঃ কিয়ৎকালের জন্য কর্ণসুবর্ণ নগর অধিকার করিয়াছিলেন, কারণ, নিধানপুরে ভাস্করবর্ম্মার যে তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহা কর্ণসুবর্ণ হইতে প্রদত্ত হইয়াছিল। অনুমান হয় যে, কামরূপ-রাজ শশাঙ্ক কর্ত্তৃক পরাজিত হইয়া অবশেষে স্থাণ্বীশ্বররাজের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিয়াছিলেন এবং হর্ষ ও ভাস্করবর্ম্মার সহিত যুদ্ধে শশাঙ্ক অবশেষে পরাজিত হইয়াছিলেন। শশাঙ্কের যে সমস্ত সুবর্ণমুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছে, তন্মধ্যে অপকৃষ্ট ও উৎকৃষ্ট উভয় জাতীয় ধাতুতে অঙ্কিত মুদ্রা দেখিতে পাওয়া যায়। গৌড়েশ্বর বোধ হয়, দীর্ঘকাল যুদ্ধ করিয়া অবশেষে অর্থাভাবে বহুল পরিমাণে রজতমিশ্রিত সুবর্ণে মুদ্রাঙ্কণ আরম্ভ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। ৬০৬ খৃষ্টাব্দে রাজ্যবর্দ্ধনের মৃত্যু হইয়াছিল। এই সময়ে শশাঙ্ক কামরূপ ব্যতীত সমগ্র উত্তর-পূর্ব্ব ভারতের অধীশ্বর ছিলেন। ৬১৯ খৃষ্টাব্দে উড়িষ্যার দক্ষিণস্থিত কোঙ্গোদমণ্ডলে সৈন্যভীত মাধববর্ম্মা নামক শশাঙ্কের জনৈক

  1. Beal’s Buddhist Records of the Western World, Vol. I, р. 213.
  2. হর্ষচরিত, ৭ম উচ্ছ্বাস।