পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।
১৫৫

হইয়াছিল যে, উক্ত কুলগ্রন্থ অকৃত্রিম নহে। উক্ত গ্রন্থের স্বত্বাধিকারী, মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী দ্বারা মূল পুথি পরীক্ষা করাইয়াছিলেন। শাস্ত্রী মহাশয় আজীবন প্রাচীন সংস্কৃত পুথি সংগ্রহ ও পাঠোদ্ধার করিতেছেন এবং এই বিষয়ে তাঁহার মত পৃথিবীর সর্ব্বত্র আদৃত ও সম্মানিত হইয়া থাকে। তিনি যখন মূল পুথি পরীক্ষা করিয়া উহা অকৃত্রিম বলিয়াছেন, তখন তৎসম্বন্ধে আমার কোন কথাই বলা উচিত নহে। কিন্তু মূল গ্রন্থ অকৃত্রিম হইলেও গত তিন বৎসর মধ্যে আবিষ্কৃত কতকগুলি প্রাচীন মুদ্রার দ্বারা প্রমাণিত হইয়াছে যে, বটুভট্টের “দেববংশ” নামক কুলগ্রন্থের ঐতিহাসিক অংশ বিশ্বাসযোগ্য নহে। দনুজমর্দ্দন ও মহেন্দ্রদেবের রজতমুদ্রা আবিষ্কারের পরে “দেববংশের” বিবরণ প্রকাশিত হইয়াছিল। শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু “দেববংশ” অবলম্বন করিয়া তাঁহার “বঙ্গের জাতীয় ইতিহাসের” রাঢ়ের দেববংশের বে বিবরণ সঙ্কলন করিয়াছেন, তাহাতে দেখিতে পাওয়া যায়, “দনুজারিদেবের সহিত গৌড়াধিপ লক্ষ্মণসেনের সৌহৃদ্য ও সম্পর্ক ছিল। যখন লক্ষ্মণসেন মুসলমান কর্ত্তৃক আক্রান্ত হইয়া রাঢ় পরিত্যাগ করেন, তখন দনুজারিও তাঁহার সহিত গিয়াছিলেন। তৎপুত্র হরিদেব পাণ্ডুনগরে গিয়া বাস করেন। হরিদেবের পুত্র নারায়ণদেব এবং নারায়ণদেবের দুই পুত্র—পুরন্দর ও পুরুজিৎ। পুরুজিতের পুত্র আদিত্য, আদিত্যের দুই পুত্র—দেবেন্দ্র ও ক্ষিতীন্দ্র। রণচণ্ডীর প্রসাদে দেবেন্দ্র পাণ্ডুনগরের অধিপতি হইয়াছিলেন। দেবেন্দ্রদেবের ঔরসে মহেন্দ্রদেব জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুসলমানদিগকে দূরীভূত করিয়া এবং কংস্যকুল নিহত করিয়া পাণ্ডুনগরের আধিপত্য লাভ করিয়াছিলেন। তৎপুত্র মহাশাক্ত মহাবীর দনুজমর্দ্দনদেব গৌড়রাজ্য পরিত্যাগ করিয়া ভার্য্যা পুত্রসহ গুরুর আদেশে সমুদ্রকুলে চন্দ্রদ্বীপে আসিয়া রাজধানী করেন, (বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, রাজন্যকাণ্ড, পৃঃ ৩৬৬-৩৬৭)। স্বর্গীয় রাধেশচন্দ্র শেঠ কর্ত্তৃক প্রকাশিত মহেন্দ্রদেবের মুদ্রার চিত্র দেখিয়া আমি অনুমান করিয়াছিলাম যে, উক্ত মুদ্রা ১৩৩৬ শকাব্দা অর্থাৎ ১৪১৪ খৃষ্টাব্দে মুদ্রাঙ্কিত হইয়াছিল। ঢাকা-বিভাগের স্কুল-সমূহের ইনস্পেক্টর শ্রীযুক্ত ষ্টেপলটন্ (H. E. Stapleton) বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদে রক্ষিত খুলনা জেলায় আবিষ্কৃত দনুজমর্দ্দনদেবের মুদ্রাদর্শন করিতে আসিয়া আমাকে মহেন্দ্রদেবের অনেকগুলি রজতমুদ্রা দেখাইয়াছিলেন। এই সমস্ত মুদ্রা ১৩৪০-১৩৪৯ শকাব্দের (১৪১৮-১৪২৭ খৃষ্টাব্দের) মধ্যে কোন সময়ে মুদ্রাঙ্কিত হইয়াছিল। কারণ, এই সকল মুদ্রার সহস্রাঙ্কের