পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পরিচ্ছেদ।
২১৩

ছিলেন[১]। বীরদেবের শিলালিপিখানি এখন কলিকাতার চিত্রশালায় রক্ষিত আছে, কিন্তু মুঙ্গেরে আবিষ্কৃত দেবপালের তাম্রশাসনের এখন আর কোনই সন্ধান পাওয়া যায় না[২]। নালন্দার তাম্রশাসন দেবপালদেবের ৩৮শ রাজ্যাঙ্কে সম্পাদিত হইয়াছিল, সুতরাং দেবপালদেব প্রায় চত্বারিংশৎ বর্ষকাল রাজত্ব করিয়াছিলেন। ধর্ম্মপালদেবের রাজ্যকালে শাণ্ডিল্যবংশীয় গর্গদেব তাঁহার প্রধান অমাত্য ছিলেন। ধর্ম্মপালদেবের রাজ্যের শেষভাগে গর্গদেবের পুত্র দর্ভপাণি গৌড়েশ্বরের প্রধান অমাত্য হইয়াছিলেন। দর্ভপাণির প্রপৌত্র গুরবমিশ্রের স্তম্ভলিপি হইতে অবগত হওয়া যায় যে, দেবপাল দর্ভপাণিকে অত্যন্ত সম্মান করিতেন। কথিত আছে যে, “দর্ভপাণির নীতিকৌশলে শ্রীদেবপাল [নামক] নৃপতি মতঙ্গজ-মদাভিষিক্ত-শিলাসংহতিপূর্ণ রেবা (নর্ম্মদা] নদীর জনক [উৎপত্তিস্থান বিন্ধ্যপর্ব্বত] হইতে [আরম্ভ করিয়া] মহেশললাট-শোভি-ইন্দুকিরণ-শ্বেতায়মান গৌরীজনক [হিমালয়] পর্ব্বত পর্য্যন্ত, সূর্য্যোদয়াস্তকালে অরুণরাগ-রঞ্জিত [উভয়] জলরাশির আধার পূর্ব্বসমুদ্র এবং পশ্চিম-সমুদ্র [মধ্যবর্ত্তী] সমগ্র ভূভাগ কর-প্রদ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন।”

“নানা-মদমত্ত-মতঙ্গজ-মদবারি-নিষিক্ত-ধরণীতল-বিসর্পি-ধূলিপটলে দিগন্তরাল সমাচ্ছন্ন করিয়া, দিক্‌চক্রাগত-ভূপালবৃন্দের চিরসঞ্চরমাণ সেনাসমূহ যাঁহাকে নিরন্তর দুর্ব্বিলোক করিয়া রাখিত, সেই দেবপাল [নামক] নরপাল [উপদেশ গ্রহণের জন্য] দর্ভপাণির অবসরের অপেক্ষায়, তাঁহার দ্বারদেশে দণ্ডায়মান থাকিতেন।”

  1. গিরিয়েক পর্ব্বতশীর্ষে দুইটি বৃহৎ ইষ্টকনির্ম্মিত চৈত্যের ধংসাবশেষ অদ্যাপি বিদ্যমান আছে, সম্ভবতঃ এই দুইটি চৈত্যই বীরদেব কর্ত্তৃক নির্ম্মিত হইয়াছিল।
  2. গৌড়রাজমালা, পৃঃ ৩৩। (উইকিসংকলন টীকা: তাম্রশাসনটি পরে পাওয়া যায় এবং ১৯২৫ সালে এর সঠিক পাঠ ছবিসহ প্রকাশিত হয়। এখানে দেখুন।)