পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪০
বাঙ্গালার ইতিহাস।

হইয়া চাহমান-বীর ক্রমশঃ অবসন্ন হইয়া পড়িলেন। তখন অন্যান্য আর্য্যাবর্ত্ত-রাজগণের মধ্যে কেহই তাঁহার সাহায্যার্থ অগ্রসর হন নাই। স্মিথ বলিয়াছিলেন যে, মুসলমানগণের আক্রমণের আশঙ্কায় আর্য্যাবর্ত্ত-রাজগণ কিয়ৎকালের জন্য গৃহ-বিবাদ স্থগিত রাখিয়া মুসলমানগণের বিরুদ্ধে একত্র দণ্ডায়মান হইয়াছিলেন[১]; কিন্তু এই উক্তি কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত হয় নাই। আর্য্যাবর্ত্তের কোন রাজা পৃথ্বীরাজের পক্ষাবলম্বন করিয়াছিলেন বলিয়া বোধ হয় না। ১৭৬১ খৃষ্টাব্দের পাণিপথের প্রাচীন যুদ্ধক্ষেত্রে মহারাষ্ট্র-শক্তি যখন সমবেত মুসলমান-রাজগণের চেষ্টায় বিধ্বস্ত হইয়াছিল তখনও রাজপুত-রাজগণ হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্রধারণ করেন নাই। জাঠগণ মহারাষ্ট্রীয়গণকে সাহায্যের পরিবর্ত্তে বারংবার তাঁহাদিগের শিবির লুণ্ঠন করিয়া আহ্‌মদ শাহ আবদালীর সাহায্য করিয়াছিল। সেইরূপ খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর শেষপাদে মুসলমানগণের আক্রমণে চাহমান-রাজ যখন আত্মরক্ষার জন্য কাতর হইয়াছিলেন তখন পূর্ব্বকৃত অপমানের প্রতিশোধ লইবার জন্য চন্দেল্ল-রাজ নিশ্চিন্তমনে কালঞ্জর দুর্গে দিন যাপন করিতেছিলেন। গর্ব্বিত গোবিন্দচন্দ্রের পৌত্র জয়চ্চন্দ্র তাঁহার সাহায্যার্থ অগ্রসর হওয়া কর্ত্তব্য মনে করেন নাই, মগধে পাল-রাজবংশের শেষ রাজা আত্মরক্ষার চিন্তায় ব্যস্ত ছিলেন এবং গৌড়ের সেনবংশীয় রাজা অধিকার-বিস্তারের চিন্তায় অথবা কবিতা রচনায় দিবস অতিবাহিত করিতেছিলেন। ১১৯২ খৃষ্টাব্দে পৃথ্বীরাজ গোর-রাজ মহম্মদ-বিন-সামকে পরাজিত করিয়াছিলেন, কিন্তু পরবৎসর তিনি স্বয়ং পরাজিত হইয়াছিলেন। পৃথ্বীরাজের মৃত্যুর পরে দিল্লী হইতে আজমীর পর্য্যন্ত সমস্ত ভূভাগ অধিকার করিতে

  1. V. A. Smith, Early History of India, 3rd Edition, p. 389.