পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গ্‌লার বেগম

হইয়াছিলেন। তিনি ইচ্ছা করিলে এ সময় যদিও অত্যাচারী রেজা খাঁর অনিষ্ট করিতে পারিতেন, কিন্তু তথাপি তিনি তাহা করেন নাই। তিনি রেজা খাঁর মুক্তির জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াছিলেন। মণিবেগমের কৌশলে কলিকাতার কাউন্সিল নন্দকুমারের দ্বাবিংশতি বর্ষবয়স্ক পুত্র গুরুদাসকে ‘রাজা গৌরপৎ’ উপাধি ভূষিত করিয়া, দেওয়ান ও হিসাবরক্ষকের পদে এবং বিমাতা মণিবেগমকে নবাবের অভিভাবকরূপে রাজকার্য্য পরিদর্শন করিতে নিযুক্ত করিলেন। এইরূপে বুদ্ধিমতী মণিবেগম ক্ষমতাশালী মহারাজ নন্দকুমারকে বশীভূত করিয়া স্বপক্ষ সমর্থন করিবার সুযোগ পাইলেন।

 মোবারকের মাতা বুব্বু বেগমের পরিবর্ত্তে বিমাতা মণিবেগম কেন যে অভিভাবিকা নিযুক্ত হইয়াছিলেন, তাহার কোন সন্তোষজনক কারণ আমরা জ্ঞাত নহি; তবে এইমাত্র জানিতে পারা যায় যে, বব্বু বেগম স্বীয় পুত্রের অভিভাবিকা নিযুক্ত হইবার জন্য প্রার্থনা করিয়াছিলেন, কিন্তু গভর্ণর হেষ্টিংশ তাঁহার আবেদন অগ্রাহ করিয়া, মণিবেগমকে ঐ পদের উপযুক্ত স্থির করেন।

 কার্য্যের সুবিধার জন্য মণিবেগম রাজা গুরুদাসের অধীনে ইৎবর আলি খাঁ নামক একজন খোজাকে নিযুক্ত করেন। প্রকৃত প্রস্তাবে ইৎবর আলিই নায়েবপদে প্রতিষ্ঠিত হইলেন। তিনি অতিশয় নির্ব্বোধ ও নীচমনা ছিলেন। পদগর্ব্বে-গর্ব্বিত ইৎবর সন্ত্রান্ত লোক দিগকে নির্যাতিত করিয়া রাজ্যে অশান্তি আনয়ন করিয়াছিলেন। মণিবেগম এই নির্ব্বোধ, শাসনকার্য্যে-অনভিজ্ঞ খোজার প্রতি কৃপাপরবশ হওয়ায়, অনেকেরই বিরাগভাজন হইয়াছিলেন এবং ইহারই কুপরামর্শে তিনি মোবারকের অভিভাবিকা হইতে সমর্থ হইয়াছিলেন।

৪০