পাতা:বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তার পর আমার বিশ্বাসের স্বপ্ন ফলিল, আমার কারামুক্তি আসিল । এক দিন জেলের তদানীন্তন সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট সাহেব আসিয়া জানাইয়া গেলেন যে, আমি, উপেন ও হেমদ আলিপুর জেলে নীতি হইয়া সেখান হইতে মুক্ত হইব। আশায় ঔৎসুক্যে সুখের অনিদ্রায় জেলখানায় কয়েকদিন কাটিল, তাহার পর একদিন শুভ প্ৰাতে আমরা জেল-ফটক পার হইয়া বাহিরের মুক্ত হরিৎ জগতে পা দিলাম । তখনও সঙ্গে সশস্ত্র প্রহরীর দল, কারণ তখনও আমরা মুক্তির পথে মাত্র। সঙ্গে। ২২/২৩ জন শিখ রাজনীতিক-বন্দীও মুক্ত হইয়া বাহির হইয়াছিল, তাহারা প্ৰভাতের উজ্জল আকাশ বাতাস মুখরিত স্তম্ভিত করিয়া গাহিতে গাহিতে চলিল, “ধন ধন পিতা দশমেশ গুরু জিহ্ন চিড়িয়াতু বাজ তুড়ায়ে” “ধন্য ধন্য পিতা দশম গুরু, যিনি বাজের মুখ হইতে পাখীকে ছাড়াইয়াছেন”। আমরা বোটে চড়িয়া নীল তরঙ্গ ভেদ করিয়া জাহাজে গিয়া উঠিলাম, তখনও সেই জয়গান চলিতেছে। আজ আমার সত্য সত্যই ধারণা হইল, এ জীবনে ভগবানের আরও কাজ আছে। আন্দামানে যে লোহা পিটাইয়া, জগতের চক্ৰী যে অস্ত্র গড়িতেছিলেন, তাহা তঁহারই ব্যবহারে লইয়া যাইতেছেন। তবু মানুষের মন তো ? সে তখনই কল্পনায় নুতন সাধের সুখ-গোহ বাধিতে বসিয়াছে, যত মরা আশা এই নব মুক্তির ভরা বাদরে আবার মুঞ্জরিয়া জীবন-মরু হরিৎ করিয়া তুলিতেছে।