পাতা:বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কানাই ও সত্যেনের চরিত্র ԵԳ আমরা সবাই ছিলাম অল্প বিস্তর বাচাল এক কানাই বাদে, সেই ছিল আমাদের মধ্যে নীরব মৌন মানুষ, অ-দরকারে সে বড় একটা কথা কহিত না । ক্রমাগতই সে আমার কাছে একটা প্ৰাণমন ভরা কাজ চাইত, আমি তখন সবে বাগানে আডিডা ফাদিবার সংকল্পে আছি, হঠাৎ ফর্মাস-মাফিক কাজ তখন দিই কোথা হইতে । মানুষটিও নিতান্ত জরাজীর্ণ, নিত্যই একবার করিয়া সেই বাঙ্গালীর দোসর ম্যালেরিয়া অসুরের কবলস্থ হয়। তাই আমরা তাহাকে আগে শরীরটা সুস্থ করিবার বরাত দিয়া পুরী পাঠাইলাম, সেও নিমরাজী হইয়া জনপ্ৰসন্নচিত্তে চলিয়া গেল । পুরী হইতে আসিয়া সে সবে গোয়াবাগানের বাসায় ছিল, মনের মত কাজ তখনও পায় নাই । তখন সেও জানিত না এবং আমিও জানিতাম না যে, তাহার মনের মত কাজ সে পাইবে, কারাগারে সহস্ৰ বন্ধনের মাঝে, এবং সে-কাজ করিয়া তাহার আর মানুষের সংসারে স্থান হইবে না । জেলে আসিয়া তাহার মন ভাঙিয়া গিয়া এক রকম আগে হইতেই জীবনে ইস্তফা দিয়াই সে বলিয়াছিল, “বিশ বছর জেল আর যেই খাটুক আমি খাটছি নে, তার অনেক আগেই নিজের ছুটি করে নেব।” কানাইলাল কি ধাতুর তৈরী বস্তু তাহা আমরা পূর্বে বুঝি নাই। সে আমাদের মধ্যে নূতন কৰ্ম্মী, তখনও তাহার কোন পরীক্ষাই হয় নাই ; নূতন মানুষ কাজের কাজী না হওয়া অবধি আমাদের কাছে আমলেই আসিত না । শেষে যখন সে বিপদের কালবৈশাখীর দিনে আপন শক্তি-পরীক্ষা। আপনি দিল, তখন তাহার দিন ফুরাইয়া আসিয়াছে; আমরা যক্ষপুরীর মাঝে জীবনের আঁধার নিশায় তাহাকে চিনিলাম। শুধু হারাইতে । সে ছিল সেই ধাতুর গড়া মহাপ্ৰাণ বীর, যাহারা স্বভাববশে পরের জন্য অযাচিত হইয়া জীবন দেয়, সে ছিল ভারতের চতুৰ্বর্ণের মাঝে ভগবানের গড়া ক্ষত্রিয়। দেশে ইংরাজ-শাসন না থাকিলেও সে তবু ক্ষত্ৰিয়ই হইত, আর কোন অধৰ্ম্মের বিরুদ্ধে জীবন দিয়া স্বধৰ্ম্ম রাখিত ।