পাতা:বিক্রমপুর - তৃতীয় বর্ষ.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৈশাখ ১৩১২]
কেদারনাথ।
‌১১

সমাজ-সংস্কারের দিকে ছোট বড় সকলেরই লক্ষ্য রাখা উচিত। মানুষ—মানুষ—দেবতা নহে। বাসনা নিবৃত্তির বক্তৃতা দেওয়া সহজ কিন্তু কার্য্যতঃ পারা বড় কঠিন। ঠাকুরদাদার আমলের শাস্ত্রের শাসন বর্ত্তমান যুগে চলে না। যাক্ আসল কথা বলি।

 আমরা প্রায় বেলা দশটার সময় কেদারনাথ ধামে পঁহুছিলাম। হৃদয় আনন্দে ভরিয়া গেল। তাড়াতাড়ি ঝাম্পান হইতে অবতীর্ণ হইয়া সমবেত যাত্রী। মণ্ডলীর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলাইয়া বলিলাম “জয় কেদারনাথজীকি জয়।”

 কেদারনাথের মন্দিরটি দক্ষিণ-দ্বারী। সম্মুখে বৃহং প্রস্তর-নির্ম্মিত মণ্ডপ গৃহ। সর্ব্বাগ্রে কেদারনাথজীকে দর্শন করিলাম। কেদারনাথ হস্তপদ বিশিষ্ট মূর্ত্তি নহেন—লিঙ্গ মূর্ত্তি। প্রায় পাঁচ ফিট উচ্চ এবং চারি ফিট বেড় হইবে।

 মন্দিরে প্রবেশ করিবার সম বামদিকে চারিটা মূর্ত্তি দেখিলাম। উহার তিনটি শ্বেত প্রস্তর-নির্ম্মিত, অপরটি কৃষ্ণ প্রস্তরে গঠিত। উহার মধ্যে কেদারের ভোগ মূর্তি ও বিরাজিত, এখানে দ্রৌপদী, কুন্তী, গরুড়, নারায়ণ প্রভৃতির মূর্ত্তি ও দেখিলাম। মন্দিরটি প্রাচীন, কিন্তু সম্মুখস্থ মণ্ডপ-গৃহটি আধুনিক। উহা বড় জোর পঞ্চাশ বছরের পুরানো। এখানে দেবাৰ্চ্চনার শেষ কার্য ‘গোত্র হত্যা।’ ‘গোত্রহত্যা’ কথাটা একটু বুঝাইয়া বলি। মহাদেবের শীর্ষদেশে ঘৃত বিলেপন করিয়া যাত্রিগণ কেদারনাথ দেবকে যে আলিঙ্গন করিয়া থাকেন, তাহাই ‘গোত্রহত্যা’ নামে অভিহিত। কথাটার অর্থ কি তাহা কিন্তু বুঝিতে পারিলাম না। আমরা গোত্রহত্যা সুফল প্রভৃতি কার্য্য শেষ করিয়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থান দর্শন করিবার জন্য মন্দিরের বাহিরে আসিলাম। গভর্মেণ্টের আদেশে এখানকার রাউল বা রাহুল সাহেবই কেদারনাথজীর ম্যানেজার বা সর্ব্বে সর্ব্বা। তাহার কথা পরে বলিব।

 মন্দিরের পশ্চাতে ও এদিকে ওদিকে অমৃতকুণ্ড, ব্রহ্মকুণ্ড, সুফলকুণ্ড, হংসকুণ্ড, রেতককুণ্ড, উদককুণ্ড, ইত্যাদি বিরাজমান। অমৃতকুণ্ডটি মন্দিরের নিকট অবস্থিত, খুব ছোট। একটী ছোটপাহাড়িয়া নদী পার হইয়া, হংসকুণ্ডে যাইয়া মৃত পরিজনের অস্থি ও পিণ্ড দান করিতে হয়। নদীটির নাম ‘জয়শন্তি’। হংসকুণ্ডের বেড় ছয়হাত হইবে। মন্দিরের নিকটেই রেতককু ও এই কুণ্ডের নিকট দাড়াইয়া বম্ বম্ শব্দ করিলে বুদ‌্বদ উঠিতে থাকে। ইহার কোনও