পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S80 বিচিত্র-জগৎ । প্ৰভুত্ব এখনও হারায় নাই। রেল লাইনের দূরে নিকটে ঘন নিস্তব্ধ জঙ্গলের গাছপালা যেন সব সময় মানুষের সঙ্গে প্ৰতিদ্বন্দ্বিতা করিতেছে। " জঙ্গলের এই প্ৰভুত্ব আরও বাড়িয়াছে এইজন্য, যে, এখানে মানুষের বাস খুবই কম। এখনও বর্ষাকাল সুরু হয় নাই, নদীনালা জলহান। একটা পাহাড়ী নদীর শুষ্ক খাত বাহিয়া জনৈক দেশী কুলীর সর্দার বাগান পরিদর্শনে চলিয়াছে। আরও অনেক দূর গেলে তবে দেখা গেল হয়তো জনৈক ইণ্ডিয়ান বালক একটা গাধা হাকাইয়া কোথায় যাইতেছে। তিন চার মাইলের মধ্যে এই দুটা মানুষ দেখা গেল, মধ্যে কেবল জঙ্গল আর জঙ্গল । কলাবাগান যেখানে আছে সেখানে, জঙ্গল দূরে সরিয়া গিয়াছে এই পৰ্যন্ত, কিন্তু একেবারে অস্তুষ্ঠিত হয় নাই। এদেশে জঙ্গলকে সম্পূর্ণরূপে হঠানো বড় সোজা কথা নয়। ট্ৰেণ ছোট একটা ষ্টেশনে দাড়াইল । সম্ভবতঃ এঞ্জিনে জল লইবে । ষ্টেশনের কাছে খানকতক খড়ের ঘর। ঘরের সামনে গুটিকতক কৃষ্ণকায় বালক বালিকা ধূলার উপর বসিয়া খেলা করিতেছিল। খেলা ফেলিয়া তাহারা গাড়ী দেখিতে দৌড়িয়া আসিল এবং আমাদের দেখিয়া কৌতুহলের সহিত আমাদের দিকে চাহিয়া রহিল। কলার বাগানের শ্রমিক ছাড়া এখানে অন্য মানুষের মধ্যে এক ইহাদেরই ধ। দেখিলাম। এঞ্জিন জলি লওয়া শেষ করিয়া আবার চলিল । এবার গাড়ী ধোিন নীচের দিকে নামিতেছে। পাহাড় কাটিয়া রাস্তা করা হইয়াছে। রেলপথের দুধারে এখানে ভীষণ জঙ্গল । লম্বা লম্বা ডালপালা প্ৰায় চোখে মুখে আসিয়া ঠেকে। আমরা জানালা বন্ধ করিয়া দিলাম, জানালায় কাচের গায়ে ডালপালা ঠেকিয়া খড় খড় শব্দ করিতে লাগিল । জঙ্গল ছাড়াইয়া আবার একটা খুব বড় কলা বাগান । জেটির উপর কদলী বহনকারী বিষম বড় বড় যন্ত্র । তার পরেই নদী । নদীর ধারে জেটির পাশে আসিয়া ট্ৰেণ দাড়াইলে আমরা নামিয়া ছোট একটা বোটে চড়িলাম। জেটির কাছে কলা রাখিবার অনেকগুলি গুদাম । জন কয়েক ইণ্ডিয়ান ও নিগ্ৰো কুলী জেটিতে কাজ করিতেছে। আমাদের তো দেখিয়া মনে হইল এখানে কিছুই কাজ করিবার নাই, উহারা শুধু দাড়াইয়া দাড়াইয়া রোদ পোহাইতেছে। এ যেন ঘুমের দেশ । এই ভীষণ জঙ্গলে এখানে মানুষকে ঘুম পাড়াইয়া রাখিয়াছে। নদীর উজানে আমরা চলিয়াছি। আবার সেই নিস্তব্ধতা, আবার সেই জঙ্গল। এবার যেন আরও বেশী। নদীর দুই তীরে এবার আর মনুষ্যবাসের চিহ্ন নাই। শুধুই জঙ্গল। বড় বড় গাছ জলের ধারা পৰ্য্যন্ত গজাইয়াছে। বড় বড় লতা এডালে ওডালে জড়া জড়ি করিয়া বন আরও দু'প্রবেশ্য করিয়া তুলিয়াছে। বনে দু একটা বােদর ছাড়া অন্য জানোয়ার দেখা গেল না । পরদিন আমরা সমুদ্রের ধারে ফিরিলাম। চার পাঁচখানা কলা বোঝাই মালগাড়ী ইতিমধ্যে জেটির ধারে আসিয়া লাগিয়াছে। অনেকগুলি জাহাজও কলার কঁাদির বোঝা তুলিবার জন্য প্ৰস্তুত হইয়া দাড়াইয়া আছে। একখানা ট্ৰেণ আসিয়া জেটির সাইডিং লাইনে