পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৃথিবীর বিশালতম অরণ্য (আমাজন) ܘܬܘ ܓ মারাকা দ্বীপের উপর দিয়ে যখন আমরা ধাচ্ছি, তখন সুৰ্য্য অস্ত গেল, নদীর উত্তর খাড়ির পথ ধরে হিণ্টন পুরোবেগে প্লেন চালালে, কিন্তু এ সব দেশে সুৰ্য্যাস্তের পরেই অন্ধকার নামে। আমরা শীঘ্রই বুঝলাম, অবিলম্বে প্লেন নীচে না নামালে সম্মুখের কৃষ্ণপক্ষের রাত্রির অন্ধকারে অজানা জঙ্গলের উপর দিয়ে ওড়া যাবে না, কোথায় যেতে কোথায় গিয়ে পড়ব । নীচে তিনটি দ্বীপ দেখা গেল। মাঝের দ্বীপটিাতে একটা বালির চড়া। আমরা ঠিক করলাম, প্লেন নামাবার পক্ষে এর চেয়ে নিরাপদ স্থান আর মিলবে না । হিণ্টন সুকৌশলে ঠিক সেই বালির চড়ার সঙ্গে নদীর জলে প্লেন নামালে । তারপর তাকে চড়ার কাছে নিয়ে আসা গেল । সেই নির্জন দ্বীপের মধ্যে আমাদের এগার দিন কেটে গেল । দ্বীপটি ঘন জঙ্গলে ভরা ও সম্পূর্ণ জনহীন। মাইল খানেক লম্বা ও সিকি মাইল চওড়া হবে। একটা জায়গা বেছে নিয়ে সেখানে দুটাে গাছের মধ্যে একটা দড়ি টাঙিয়ে তার উপর এক টুকরা চট্ট বিছিয়ে তাঁবু খাটান হ’ল। তারই নীচে আমাদের দোলনার দড়ির শয্যা টাঙিয়ে নিলাম। এ সব জঙ্গলে সকলেই এই দোলনার মত শয্যা করে, মাটীতে কেউ শোয় না । এ জঙ্গলে মাটীতে শোবার বিপদ যে কত ধরণের, তার সংখ্যা হয় না । উই, জোক, মশা, ডাশ তো আছে, তা বাদে আছে হরেক রকমের সাপ-বিষাক্ত ও নিৰ্ব্বিষ, ছোট SDLD DBD KuS SEDBDBD KKS gDDBS KSS SK YT BDD শয্যার উপরে একটা আচ্ছাদন থাকা নিরাপদ । একদিন একটা ডোঙ্গায় চারজন ইণ্ডিয়ান নদী বেয়ে যেতে যেতে আমাদের তঁাবুর ধোয়া দেখে সেখানে এল । তারা সকলেই বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ব্যবহারও বেশ নম্র । আমরা লক্ষ্য করলাম, তাদের কাছে কোন ধাতুনির্মিত দ্রব্য s নেই ; জঙ্গলজাত দ্রব্যে তাদের সকল অভাব পূর্ণ করেছে। আদিম ইণ্ডিয়ানের শিশু : পারিম তীরে । আমাদের হাইড্রোপ্লেন দেখে তারা খুব বেশী আশ্চৰ্য্য হ’ল না। আমরা অসভ্য জাতিদের মধ্যে - হু দিন ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ফলে এটা বুঝতে পেরেছি যে, বিস্ময় জিনিষটা অপরিণত মনের পক্ষে সুলভ নয়। ওরা ভাবলে আমাদের মত শ্বেতকায় মানুষে যে আকাশপথে উড়ে বেড়াবে, এটা আর বেশী কথা কি ? যাদের গায়ের চামড়া সাদা, তাদের পক্ষে সবই সম্ভব। আমরা দেখলাম, ওদের গায়ে ডাঁশ বা মশা কামড়াবার দাগ নেই, বোধ হয় চিনি বা লবণ ব্যবহার না করার দরুণ ওদের রক্ত এমন ভাবে পরিবৰ্ত্তিত হয়েছে যে, মশামাছির তা স্বাদু বলে মনে হয় না। একদিন হিণ্টন তার সার্টটা দড়ির উপর ঝুলিয়ে রেখেছিল। সকালে উঠে সার্ট গায়ে দেবার জন্যে দড়ি থেকে যেমন তুলতে গিয়েছে, অমনি টুকরা টুকরা হয়ে খসে পড়ে গেল। রাতারাতি উইয়ে সেটাকে শেষ করে রেখেছে। ব্ৰেজিলের জঙ্গলের মত এত পোকামাকড়ের দৌরাত্ম্য কোথাও দেখি নি। Sዓ