পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বোম্বোটেদের সহর সেন্ট ম্যালো b”创 ১৯০৫ সালে কাৰ্ত্তিয়ের একটি ৰোঞ্জ মূৰ্ত্তি এখানে স্থাপিত হইয়াছে। প্রাচীন নাবিকের পোষাকে ফ্রান্সের এই বীরসন্তান জাহাজের হাইলের উপর ভর দিয়া দাড়াইয়া অনন্ত জলরাশির ওপারে কানাডার দিকেই যেন চাহিয়া আছেন—যে কানাডা ফ্রান্স পরবর্তী কালে হারাইয়া ফেলিয়াছে। বিখ্যাত জলদসু্য দুগুয়ে এই শহরেই ১৬৭৩ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্ৰহণ করে- যে বাড়ীতে সে ভূমিষ্ঠ হয়, সে বাড়ীটি এখনও আছে। ১৮ বছর বয়সেই দুগুয়ে একদল বোম্বেটের দলপতি হইয়াছিল- দুগুয়ে সত্যকার ব্রিটন ছিল, ব্রিটন জাতির দুৰ্দ্ধৰ্য সাহস, সমুদ্রের উপর গভীর টান, স্বদেশপ্রিয়তা তাহাকে অষ্টাদশ শতাব্দীর অতি-বিখ্যাত জলদসু্য, করিয়া তুলিয়াছিল। ১৭০৯ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্সের রাজা তাহাকে উপাধিতে ভূষিত করেন, ইতিমধ্যে সে কুড়িখানি যুদ্ধ-জাহাজ ও তিনশত সওদাগরী-জাহাজ লুঠের দ্রব্যস্বরূপ ফ্রান্সকে উপহার দিয়াছিল। ১৭১১ খৃষ্টাব্দে দুগুয়ে ব্ৰেজিলের রাজধানী রিও দে-জেনিরো আক্রমণ ও অধিকার করিয়া সেখান হইতে অনেক লুণ্ঠন-দ্রব্য লইয়া আসে। সেখান হইতে একটা সুবৃহৎ ঘণ্টা আনা হয়, একশত বৎসর ধরিয়া সেন্ট ম্যালো শহরের প্রধান ফটকের ঘড়িঘর হইতে সেটি প্রহর ঘোষণা করিত। ফরাসী-বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহীরা এই ঘড়িঘর ভূমিসাৎ করিয়া ফেলে, সেন্ট ক্ৰিষ্টেফারের নাক ভাঙিয়া দেয় ও কুমারী মেরীর মুক্তি পরিখার জলে টান মারিয়া ফেলে। বিদ্রোহের উত্তেজনা কাটিয়া যাওয়ার পরে মেরীর মূৰ্ত্তিকে জল হইতে তুলিয়া আবার সদর ফটকের উপরে যথাস্থানে প্রতিষ্ঠিত করা হইয়াছে। ঘণ্টাটিও এখন স্থানীয় একটি গির্জার মাথায় প্রাচীন দিনের মতই প্রহর ঘোষণা করে। : ব্রিটানির এই সাহসী, দুৰ্দ্ধৰ্ষ সস্তানের প্রতিমূৰ্ত্তি সেণ্ট ম্যালোর পথের ধারে এখনও দণ্ডায়মান আছে। ব্রিটানির জলদসু্যরা ইংরেজদের ভাল চক্ষে দেখিত না । ইংরেজেরাও তাহাদের প্রতি যে মনোভাব পোষণ করিত, তাহাকে ব্যক্ত করার উপযুক্ত শব্দ ইংরেজী ভাষাতে নাই। গল্প প্ৰচলিত আছে, একবার জনৈক বন্দী ব্রিটনকে একটি ইংরেজ জাহাজের মাস্তুলে বাধিয়া চারিদিক হইতে তীর, ছুরি, গরম সাড়শী প্ৰভৃতির খোচায় ধীরে ধীরে মারিয়া ফেলা হইতেছিল। . . . . . . . . হঠাৎ জাহাজের কাপ্তেন ব্যঙ্গের সুরে বলিল-শোন, তোমরা লড়াই কর টাকার জন্য, আমরা লড়াই করি ইজ্জতের জন্য। মুম্বুয়ু বন্দী ব্রিটন বলিল, তবেই দেখুন, আমরা প্রত্যেকেই এমন একটা জিনিষের জন্য লড়াই করি, যা আমাদের আসলে নাই। " . . . . . d সেন্ট ম্যালোর সমুদ্রতীরবর্তী একটি পাহাড়ের উপর কতকগুলি অদ্ভুত মূৰ্ত্তি আছে-এইগুলি “দোদুর সন্ন্যাসী” নামক একজন স্থানীয় শিল্পী পাহাড় কাটিয়া তৈয়ার করিয়াছিল। মূৰ্ত্তিগুলির মধ্যে খ্ৰীষ্টান সাধু ও সাপ, পশুপক্ষী, গৃহস্থালীর দৃশ্য-নানা রকম আছে। ১৯১০ খৃষ্টাব্দে এই শিল্পীর মৃত্যু হইয়াছে।