পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২০
বিচিত্র প্রবন্ধ

অধিকার বিস্তার করছে। এই অধিকার বিস্তারকে একদল লোক দোষ দেয়, বলে ওতে আমরা নিজেকে হারালুম—তারা জানে না নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া নিজেকে হারিয়ে যাওয়া নয়—কারণ বৃদ্ধি মাত্রই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া।

 সম্প্রতি আমাদের দেশে চিত্রকলার যে নবজীবন লাভের লক্ষণ দেখছি তার মূলেও সেই সাগরপারের রাজপুত্রের সোনার কাঠি আছে। কাঠি ছোঁয়ার প্রথম অবস্থায় ঘুমের ঘোরটা যখন সম্পূর্ণ কাটে না, তখন আমরা নিজের শক্তি পুরোপুরি অনুভব করিনে, তখন অনুকরণটাই বড় হয়ে ওঠে, কিন্তু ঘোর কেটে গেলেই আমরা নিজের জোরে চল্‌তে পারি। সেই নিজের জোরে চলার একটা লক্ষণ এই যে তখন আমরা পরের পথেও নিজের শক্তিতেই চল্‌তে পারি। পথ নানা, অভিপ্রায়টি আমার, শক্তিটি আমার। যদি পথের বৈচিত্র্য রুদ্ধ করি, যদি একই বাঁধা পথ থাকে, তাহোলে অভিপ্রায়ের স্বাধীনতা থাকে না—তাহলে কলের চাকার মতো চল্‌তে হয়। সেই কলের চাকার পথটাকে চাকার স্বকীয় পথ ব’লে গৌরব করার মতো অদ্ভুত প্রহসন আর জগতে নেই।

 আমাদের সাহিত্যে চিত্রে সমুদ্রপারের রাজপুত্র এসে পৌঁচেছে কিন্তু সঙ্গীতে পৌঁঁছয়নি। সেই জন্যেই আজও সঙ্গীত জাগ্‌তে দেরি করছে। অথচ আমাদের জীবন জেগে উঠেছে। সেই জন্যে সঙ্গীতের বেড়া টলমল করছে। এ কথা বল্‌তে পারব না, আধুনিকের দল গনি একেবারে বর্জ্জন করেছে। কিন্তু তারা যে গান ব্যবহার করছে, যে গানে আনন্দ পাচ্চে সে গান জাত-খোয়ানো গান। তার শুদ্ধাশুদ্ধ বিচার নেই। কীর্ত্তনে বাউলে বৈঠকে মিলিয়ে যে জিনিষ আজ তৈরি হয়ে উঠ্‌ছে সে আচারভ্রষ্ট। তাকে ওস্তাদের দল নিন্দা করছে। তার মধ্যে নিন্দনীয়তা নিশ্চয়ই অনেক আছে। কিন্তু অনিন্দনীয়তাই যে সব চেয়ে বড়ো গুণ তা নয়। প্রাণশক্তি শিবের মতো অনেক বিষ হজম ক’রে,