কিছু খবর দেবার চেষ্টা করব। নইলে চিঠি বেশি ভারি হয়ে পড়ে। অনেকদিন থেকে চিঠিতে খবর চালান দেবার অভ্যাস চলে গেছে। এটা একটা ক্রটি। কেননা আমরা খবরের মধ্যেই বাস করি। যদি তোমাদের কাছে থাকতুম তাহোলে তোমরা আমাকে নানাবিধ খবরের মধ্যেই দেখতে, কী হোলো এবং কে এল এবং কী করলুম এইগুলোর মধ্যে গেঁথে নিয়ে তবে আমাকে স্পষ্ট ধরতে পারা যায়। চিঠির প্রধান কাজ হচ্ছে সেই গাঁথন সূত্রটিকে যথাসম্ভব অবিচ্ছিন্ন ক’রে রাখা। আমি যে বেঁচে বর্ত্তে আছি সেটা হোলো একটা সাধারণ তথ্য—কিন্তু সেই আমার থাকার সঙ্গে আমার চারিদিকের বিচিত্র যোগবিয়োগের ঘাতপ্রতিঘাতের দ্বারাই আমি বিশেষভাবে প্রত্যক্ষগোচর। এইজন্যেই চিঠিতে খবর দিতে হয়—দূরে থাকলে পরস্পরের মধ্যে সেই প্রত্যক্ষতাকে চালাচালি করবার দরকার হয়। প্রয়োজনটা বুঝি কিন্তু সত্যিকার চিঠি লেখার যে আর্ট সেটা খুইয়ে বসে আছি। তার কারণ হচ্ছে কাছে থাকলে তুমি আমাকে আমার চারিদিকের নব নব ব্যাপারের সঙ্গে মিলিয়ে যেমন ক’রে দেখতে, আমি নিজেকে তেমন ক’রে দেখিনে। অন্যমনস্ক স্বভাবের জন্যে আমি চারিদিককে বড়ো বেশি বাদ দিয়ে দেখি। সেইজন্যে যা ঘটে তা পরক্ষণেই ভুলে যাই—ঐতিহাসিকের মতো ঘটনাগুলোকে দেশকালের সঙ্গে গেঁথে রাখতে পারিনে। তার মুস্কিল আছে। তোমরা কেউ যখন আমার সম্বন্ধে কোনো নালিশ উপস্থিত করে তখন তোমাদের পক্ষের প্রমাণগুলোকে বেশ সুসম্বদ্ধ সাজিয়ে ধরতে পারো—আমার পক্ষের প্রমাণগুলো দেখি আমার আনমনা চিত্তের নানা ফাঁকের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আমি কেবল আমার ধারণা উপস্থিত করতে
পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৮
অবয়ব
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪৪
বিচিত্র প্রবন্ধ
২৩ অগ্রহায়ণ, ১৩৩৩
