বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিচিন্তা
১১৪

মামুলী অপরাধীদের বেলায় ঝঞ্ঝাট নেই, কিন্তু আজকাল যেসব নূতন নূতন বেআইনী ব্যাপার হচ্ছে তার বেলায় নির্ভয়ে কর্তব্য পালন অসম্ভব। অফিস ও কারখানার কর্মীরা মনিবদের আটকে রাখে, ধর্মঘটীরা রাজপথে লোকের যাতায়াতে বাধা দেয়, স্কুল কলেজ বা অফিস প্রভৃতি কর্মস্থান অবরোধ করে, গুণ্ডারা ট্রাম-বাস পোড়ায়। এসব ক্ষেত্রে পুলিস উভয় সংকটে পড়ে। নিষ্ক্রিয় থাকলে তাকে অকর্মণ্য বলা হবে, কর্তব্য পালন করলে নিষ্ঠুর অত্যাচারী বলা হবে। অধিকাংশ খবরের কাগজ অপক্ষপাতে কিছু লিখতে সাহস করে না, পাছে কোনও দল চটে। তারা দুই দিক বজায় রাখার চেষ্টা করে, ফলে পাঠকরা বিভ্রান্ত হয়। দশ-বারো বছরের ছেলে যখন বলে, নেমে যান মশাইরা, এ গাড়ি পোড়ানো হবে, তখন যাত্রীরা সুবোধ শিশুর মতন আজ্ঞা পালন করে। নাগরিক কর্তব্যবুদ্ধি এবং অন্যায় কর্মে বাধা দেবার বিন্দুমাত্র সাহস কারও নেই। ঝঞ্ঝাটে দরকার কি বাপু―এই হচ্ছে জনসাধারণের নীতি। পাশ্চাত্ত্য পানদোষ আর ইন্দ্রিয়দোষের তুলনায় এই ক্লীবতা আর কর্তব্যবিমুখতা অনেক বড় অপরাধ।

 শাসকবর্গ যদি ঘোর অত্যাচারী হয় এবং প্রতিকারের অন্য উপায় না থাকে তবে রাষ্ট্রবিপ্লব ছাড়া গতি নেই। কিন্তু কোনও দলের অসন্তোষের কারণ ঘটলেই যদি সেই দল উপদ্রব করে তবে অরাজকতা উপস্থিত হয় এবং তার ফলে জনসাধারণ সংকটে পড়ে। লোকে শান্তি চায়, অধিকাংশ লোকের এ বুদ্ধিও আছে যে দুষ্টদমনের জন্য বলপ্রয়োগ আবশ্যক এবং মাঝে মাঝে তা মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে, তার ফলে নির্দোষেরও অপঘাত হতে পারে, যেমন যুদ্ধকালে অনেক অযোদ্ধাও মারা যায়। আমাদের শাসকবর্গ এবং তাঁদের সমর্থকগণও তা বোঝেন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কর্তব্যপালনে ভয়