পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 বিচিন্তা
১৪৪

আছে, অল্প স্বল্প ভ্রমণকথাও আছে, কিন্তু আমাদের সাহিত্যে পাশ্চাত্ত্যের মতন বৈচিত্র্য এখনও দেখা যায় না।

 শুধু কৌতূহলনিবৃত্তি বা উত্তেজনার জন্য লোকে খবরের কাগজ আর কথাগ্রন্থ পড়ে না, শান্তরসও অসখ্য পাঠকের প্রিয়। শান্তরস অর্থে শুধু নামে রুচি বা ভক্তিরস নয়। বিস্তর বাঙালী স্ত্রীপুরুষ আজকাল এই রসে ডুবে আছে, তার বৃদ্ধির জন্য সাহিত্যিকদের চেষ্টা অনাবশ্যক। নামে রুচি ছাড়া জীবে দয়াও চর্চার যোগ্য। কিন্তু জীব শুধু দয়ার ভিখারী নয়, প্রীতি বিস্ময় আর কৌতূহলেরও পাত্র।

 মানুষ জীবজগতের অংশ, উদ্‌ভিদ-প্রাণীর সঙ্গে তার আদিম আত্মীয় সম্পর্ক। আমাদের স্বজাতির মধ্যে শত্রুমিত্র আছে, উদ্‌ভিদ-প্রাণীর মধ্যেও মানুষের উপকারী অপকারী আছে, কিন্তু তার জন্য সমগ্র জীবজগতের সঙ্গে আমাদের হৃদ্যতার হানি হয় নি।

 অরণ্য জনপদ নগর যেখানেই বাস করুক, আবালবৃদ্ধবনিতা সুস্থচিত্ত মানুষ মাত্রেরই সহজাত নিসর্গপ্রীতি আছে। নাগরিক জীবনযাত্রায় তা অবদমিত হতে পারে কিন্তু লুপ্ত হয় না। প্রাকৃতিক প্রতিবেশের সঙ্গে আমাদের এই চিরন্তন সম্বন্ধ এবং প্রতিবেশী বৃক্ষ লতা গুল্ম পশুপক্ষী পতঙ্গাদির প্রতি স্নেহ বিস্ময় আর কৌতূহলের ভাব প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে অনাবিল শান্তরসের উপাদান যুগিয়েছে। পাশ্চাত্ত্য লেখক আর পাঠকরাও এই রসের পরম ভক্ত। কালিদাসের শকুন্তলা আর মেঘদূত প্রধানত নিসর্গচিত্রের জন্যই ইওরোপীয় পাঠকের মনোহরণ করেছে। আধুনিক বাঙালী লেখকরা যদি শান্তরসের এই হৃদ্য চিরন্তন উপাদান উপেক্ষা করেন তবে আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বঞ্চিত হবে।

 ১৩৬১