ইংরেজী অভিধানে কালচার শব্দের যে বিশিষ্ট অর্থ দেওয়া আছে যোগেশচন্দ্র তাই বিশ্লিষ্ট করে সভ্যতা সংস্কৃতি আর কৃষ্টি এই তিন শব্দে ভাগ করে দিয়েছেন। আমার মনে হয় এই বিশ্লেষণের ফলে কালচার-বিষয়ক আলোচনা সহজ হবে। পার্থক্য সকল ক্ষেত্রে স্পষ্ট না হলেও মোটামুটি বলা যেতে পারে—
(১) ভারত-রাষ্ট্রের সংবিধান, দেওয়ানী ফৌজদারী আইন, জলসেক ব্যবস্থা, বাঁধ, সেতু, লোহা প্রভৃতির কারখানা, বিবিধ প্রাসাদ, রেলগাড়ি মোটর-কার টেলিফোন রেডিও, বিদ্যুৎশক্তির বিস্তার, স্কুল কলেজ হাসপাতাল, দেশীয় ও পাশ্চাত্ত্য চিকিৎসা পদ্ধতি প্রভৃতি বর্তমান ভারতীয় সভ্যতার পরিচায়ক, যদিও বহু ক্ষেত্রে কৃতি বা উদ্ভাবনের গৌরব বিদেশীর। চা সিগারেট কেক বিস্কুট, ইওরোপীয় প্যাণ্ট শার্ট কোট, ‘পঞ্জাবী’ জামা, গান্ধী টুপি, বিলাতী গড়নের জুতা, মাদ্রাজী চপ্পল—এ সবও আমাদের বর্তমান সভ্যতার অঙ্গ।
(২) প্রাচীন ও আধুনিক দেবমন্দির স্তূপাদি, ভারতীয় সংগীত চিত্র ও মূর্তিনির্মাণ কলা, রামায়ণ মহাভারত পুরাণ ও সংস্কৃত কাব্যাদি ভারতের সংস্কৃতির পরিচায়ক। বাঙালীর বিশিষ্ট সংস্কৃতির উদাহরণ —কীর্তন ও বাউলের গান, রবীন্দ্র সংগীত, প্রাচীন পট ও আধুনিক চিত্র-পদ্ধতি, এবং বাংলা সাহিত্য।
(৩) ভারতীয় কৃষ্টির পরিচায়ক— সংস্কৃত বর্ণমালা (alphabet), ব্যাকরণ ছন্দঃ ও অলংকার শাস্ত্র, বিবিধ দর্শন শাস্ত্র, এবং নবায়ত্ত বিজ্ঞান। বাঙালীর বিশিষ্ট কৃষ্টির উদাহরণ— নব্যন্যায়, দায়ভাগ, শুভংকরের গণনা পদ্ধতি এবং বিধবা ও অসবর্ণের বিবাহের প্রবর্তনচেষ্টা। অনাবশ্যক বোধে টিকি-বর্জন—এও বাঙালী হিন্দুর কৃষ্টির লক্ষণ।
সভ্যতা সংস্কৃতি ও কৃষ্টি কালে কালে পরিবর্তিত হয়। দেড় শ