বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৯
সংস্কৃতি ও সাহিত্য 

লেখকের ভাষাও তেমনি প্রবীণ পাঠকদের অবোধ্য হয়ে পড়েছে। আধুনিক বাঙালী লেখকদের এই প্রবৃত্তি অনেকের মতে অবাঞ্ছনীয় হলেও রােধ করা অসম্ভব; ভাল মন্দ নানা পথ দিয়ে ভাষা অগ্রসর হবে এবং যে রীতি অধিকাংশ সুধী জনের সম্মত তাই কালক্রমে প্রতিষ্ঠা পাবে।

 গত ৫ নভেম্বরে Nature পত্রিকায় Dr. John R. Baker একটি প্রবন্ধে লিখেছেন—

 Many scientific papers published in Great Britain are written in a style quite different from that adopted by good English authors........Three kinds of error are—those of grammar, grandiloquence, and German construction.

 ইংরেজী লেখকদের বিরুদ্ধে ইনি যে অভিযোগ এনেছেন আধুনিক অনেক বাংলা লেখকদের সম্বন্ধেও তা খাটে—ব্যাকরণের ভুল, আড়ম্বর, এবং (জর্মানের বদলে) ইংরেজী বাক্যরীতি।

 হিন্দীর কিছু প্রভাব বাংলা ভাষার উপর অবশ্যই আসবে। হিন্দীর মহত্ত্বের জন্য নয়, ভারতের সর্বাধিক প্রচলিত এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রভাষা বলেই আসবে। তার লক্ষণ এখনই দেখা যায়। অনেক বাঙালী লেখক 'নূতন' স্থানে 'নয়া', 'সমুদ্র' স্থানে 'দরিয়া', 'স্বাধীনতা' স্থানে 'আজাদী' লিখতে ভালবাসেন। অনেকে 'প্রদেশ, বিপ্লব, শিল্প' স্থানে 'প্রান্ত, ক্রান্তি, উদ্যোগ' লিখছেন। কালক্রমে হয়তো 'অনুগ্রহপূর্বক' স্থানে হিন্দী 'কৃপয়া', ডাকবাক্স স্থানে 'চিঠ্ঠি ঘুসেড়', 'জরুরী' স্থানে 'ধড়ধড়' চলবে। অনেক বাংলা বই-এর নাম মলাটের উপর নাগরী ছাঁদে লেখা হয়। বাঙালী যদি রাশি রাশি ইংরেজী ভেজাল হজম করতে পারে তবে একটু ভারতীয় ভেজাল সইবে না কেন?

 ১৩৬৩