পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 বিচিন্তা
৭২

 রবীন্দ্রনাথ যে ব্যাপক অর্থে হিন্দু শব্দ প্রয়ােগ করেছেন সে অর্থ এখন চলবার কোনও সম্ভাবনা নেই। হিন্দু শব্দের আধুনিক অর্থ দাঁড়িয়েছে—ভারতজাত-ধর্মাবলম্বী। বৌদ্ধ জৈন শিখ ব্রাহ্ম সনাতনী—এরা হিন্দু, কিন্তু মুসলমান খ্রীষ্টান হিন্দু নয়। যদি এই সংকীর্ণ সংজ্ঞার্থের প্রচলন নাও হত তথাপি কোনও মুসলমান হিন্দু নামের অন্তর্ভুক্ত হতে চাইত না। রবীন্দ্রনাথ যে সাজাত্যবােধ কামনা করেছিলেন তা এখন 'ভারতীয়' নামের উপর গড়ে উঠতে পারে।

 পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিতদের মতে nationality বা সাজাত্যের কারণ—নিবাস, উৎপত্তি (origin), ভাষা, ধর্ম, ঐতিহ্য (traditions), সংস্কৃতি ও স্বার্থের ঐক্য। কোনও রাষ্ট্রে এই ঐক্য পুরােপুরি না থাকলেও সাজাত্যের প্রতিষ্ঠা হতে পারে। মার্কিন রাষ্ট্রে উৎপত্তি আর ঐতিহ্যের ঐক্য নেই, ধর্মও সমান নয় (প্রোটেস্টাণ্ট, ক্যাথলিক, ইহুদী), ভাষার ঐক্য প্রয়োজনের বশে হয়েছে। কানাডারও ওই অবস্থা, সেখানে ভাষারও ঐক্য নাই। সুইটজারল্যাণ্ডেও উৎপত্তি ভাষা আর ধর্ম সমান নয়। সােভিএট রাষ্ট্রে নিবাস আর স্বার্থ ছাড়া আর কিছুর ঐক্য নেই, ধর্ম সেখানে দুর্বল সেজন্য গণ্য নয়। তথাপি এই সব রাষ্ট্রের অধিবাসীরা সাজাত্য লাভ করেছে। সমগ্র ভারতরাষ্ট্রে উৎপত্তি আর ভাষার যতই ভেদ থাকুক, প্রদেশের (রাজ্যের বা স্টেটের) মধ্যে ভেদ সর্বত্র নেই, পশ্চিমবঙ্গে মােটেই নেই, স্বার্থও সকলের সমান।

 ভারত-পাকিস্তান বিরোধ মিটতে হয়তো অনেক সময় লাগবে, কিন্তু ভারতী প্রজার মধ্যে প্রীতি ও সাজাত্যবােধ প্রতিষ্ঠায় দেরি করা চলবে না। হিন্দু আর মুসলমান পরস্পরকে সন্দেহের চোখে দেখে এ কথা চাপা দিয়ে লাভ নেই। এই অপ্রীতির কারণ নিয়ে দুই পক্ষের অনেক বাদানুবাদ হয়েছে। কার দোষ কত তার আলােচনা না করে