জীবনচরিতপাঠে দ্বিবিধ মহোপকার লাভ হয়। প্রথমতঃ, কোন কোন মহাত্মারা অভিপ্রেতসম্পাদনে কৃতকার্য্য হইবার নিমিত্ত যেরূপ অক্লিষ্ট পরিশ্রম, অবিচলিত উৎসাহ, মহীয়সী সহিষ্ণুতা ও দৃঢ়তর অধ্যবসায় প্রদর্শন করিয়াছেন এবং কেহ কেহ বহুতর দুর্বিষহ নিগ্রহ ও দারিদ্র্যনিবন্ধন অশেষ ক্লেশ ভোগ করিয়াও যে ব্যবসায় হইতে বিচলিত হয়েন নাই, তৎসমুদায় আলোচনা করিলে এক কালে সহস্র উপদেশের ফল প্রাপ্ত হওয়া যায়। দ্বিতীয়তঃ, আনুষঙ্গিক তত্তদেশের তত্তৎকালীন রীতি, নীতি, ইতিহাস ও আচার পরিজ্ঞান হয়। যে বিষয়ের অনুশীলনে এতাদৃশ মহার্থলাভ সম্পন্ন হইতে পারে, তাহাকে অবশ্যই শিক্ষাকার্য্যের এক প্রধান অঙ্গ বলিয়া অঙ্গীকার করিতে হইবে।
রবর্ট ও উইলিয়ম চেম্বর্স, বহুসংখ্যক সুপ্রসিদ্ধ মহানুভবদিগের বৃত্তান্ত সঙ্কলন করিয়া, ইঙ্গরেজী ভাষায় যে জীবনচরিতপুস্তক প্রচার করিয়াছেন, তাহা বাঙ্গালা ভাষায় অনুবাদিত হইলে, এতদ্দেশীয় বিদ্যার্থিগণের পক্ষে বিশিষ্টরূপ উপকার দর্শিতে পারে, এই আশয়ে আমি ঐ পুস্তকের অনুবাদে প্রবৃত্ত হইয়াছিলাম। কিন্তু, সময়াভাব ও অন্যান্য কতিপয় প্রতিবন্ধক বশতঃ, তন্মধ্যে আপাততঃ কেবল কোপর্নিকস, গালিলিয়, নিউটন, হর্শেল, গ্রোশ্যস, লিনিয়স, ডুবাল, জেস্কিন্স ও জোন্স এই কয়েক মহাত্মার চরিত অনুবাদিত ও প্রচারিত হইল।
ইয়ুরোপীয় পদার্থবিদ্যা ও অন্যান্য বিদ্যা সংক্রান্ত অনেক কথার বাঙ্গালা ভাষায় অসঙ্গতি আছে; ঐ অসঙ্গতি পূরণার্থে কোনও কোনও স্থলে দুরূহ সংস্কৃত শব্দ প্রয়োগ ও স্থলবিশেষে তত্তৎ কথার অর্থ ও তাৎপর্য্য পর্য্যালোচনা করিয়া তৎপ্রতিরূপ নূতন শব্দ সঙ্কলন করিতে হইয়াছে; পাঠকগণের বোধসৌকর্য্যার্থে পুস্তকের শেষে তাহাদের অর্থ ও বুৎপত্তিক্রম প্রকাশিত হইল। কিন্তু সঙ্কলিত শব্দ সকল বিশুদ্ধ ও অবিসংবাদিত হইয়াছে কি না সে বিষয়ে আমি অপরিতৃপ্ত রহিলাম।
বাঙ্গালায় ইঙ্গরেজীর অবিকল অনুবাদ করা অত্যন্ত দুরূহ কর্ম্ম; ভাষাদ্বয়ের রীতি ও রচনাপ্রণালী পরস্পর নিতান্ত বিপরীত; এই নিমিত্ত, অনুবাদক অত্যন্ত সাবধান ও যত্নবান হইলেও অনুবাদিত গ্রন্থে রীতিবৈলক্ষণ্য, অর্থপ্রতীতির ব্যতিক্রম ও মূলার্থের বৈকল্য ঘটিয়া থাকে। আমি ঐ সমস্ত দোষ অতিক্রম করিবার আশয়ে অনেক স্থলে অবিকল