হলণ্ডের রাজদূত বর্নিবেণ্টের সমভিব্যাহারে পারিস রাজধানী গমন করেন, তথায় বুদ্ধিনৈপুণ্য ও সুশীলতা দ্বারা ফ্রান্সের অধিপতি সুপ্রসিদ্ধ চতুর্থ হেনরির নিকট ভূয়সী প্রতিষ্ঠা লাভ করেন, এবং সর্ব্বত্র অদ্ভুত পদার্থ বলিয়া পরিগণিত ও প্রশংসিত হয়েন। হলণ্ডপ্রত্যাগমনের পর, তিনি ব্যবহারজীবের ব্যবসায় অবলম্বন করিলেন, এবং সতর বৎসর বয়সে, ধর্ম্মাধিকরণে প্রথম বারেই এমন অসাধারণ রূপে আত্মপক্ষ সমর্থন করিলেন যে, তদ্দ্বারা অতি প্রভূত খ্যাতি ও প্রতিপত্তি লাভ করিলেন, এবং অল্পকালমধ্যে প্রধান ব্যবহারজীবের পদে অধিরূঢ় হইলেন।
বীরনগরের অধ্যক্ষের মেরি রিজর্সবর্গনাম্নী এক তনয়া ছিল। গ্রোশ্যাস, ১৬০৮ খৃঃ অব্দে, ঐ কামিনীর পাণিগ্রহণ করিলেন। এই রমণী রমণীয় গুণগ্রাম দ্বারা গ্রোশ্যাসের যোগ্য ছিলেন, এবং গ্রোশ্যাসের সহধর্ম্মিণী হওয়াতেই, তাঁহার গুণের সমুচিত সমাদর হইয়াছিল। কি সম্পত্তি, কি বিপত্তি, সকল সময়েই তাঁহারা পরস্পর অবিচলিত সদ্ভাবে ও যৎপরোনাস্তি প্রণয়ে কালযাপন করিয়াছিলেন। কিঞ্চিৎ পরেই দৃষ্ট হইবেক, নিগৃহীত স্বামীর ক্লেশশান্তিবিষয়ে, ঐ পতিপ্রাণা কামিনীর ঐকান্তিক প্রণয়ের কি পর্য্যন্ত উপযোগিতা হইয়াছিল।
গ্রোশ্যাস অত্যন্ত কুৎসিত সময়ে ভূমণ্ডলে আসিয়াছিলেন। ঐ কালে জনসমাজ ধর্ম্ম ও দণ্ডনীতি বিষয়ক বিষম বিসংবাদ দ্বারা সাতিশয় বিসঙ্কুল ছিল। মনুষ্যমাত্রেই ধর্ম্মসংক্রান্ত বিবাদে উন্মত্ত, এবং ভিন্ন ভিন্ন পক্ষের ঔদ্ধত্য ও কলহপ্রিয়তা দ্বারা সৌজন্য ও দয়া দাক্ষিণ্য একান্ত বিলুপ্ত হইয়াছিল। গ্রোশ্যস, আম্মিনিয় সাম্প্রদায়িক[১] ও সর্ব্বতন্ত্রপক্ষীয় [২] ছিলেন। তিনি স্বীয়ব্যবসায়িককার্য্যোপলক্ষে ত্বরায় এমন বিবাদীবাগুরাতে পতিত হইলেন যে, তাহা হইতে মুক্ত হওয়া অত্যন্ত দুরূহ হইয়া উঠিল। তাঁহার তুল্যমতাবলম্বী পূর্ব্বসহায় বর্নিবেণ্ট অভিদ্রোহাভিযোগে ধর্ম্মাধিকরণে নীত হইলে, তিনি স্বীয় লেখনী ও আধিপত্য দ্বারা তাঁহার যথোচিত সহায়তা করিলেন। কিন্তু তাঁহার সমুদায় প্রয়াস বিফল হইল। ১৬১৯ খুঃ অব্দে, বর্নিবেণ্টের প্রাণদণ্ড হইল, এবং গ্রোশ্যাস দক্ষিণ ১৪
- ↑ খৃষ্টধর্ম্মাবলম্বীদিগের মধ্যে আম্মিনিয়স্ নামে এক ব্যক্তি এক নূতন সম্প্রদায় প্রবর্ত্তিত করেন। প্রবর্ত্তকের নামানুসারে ইহার নাম আর্ম্মিনিয়া সম্প্রদায় হইয়াছে। অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকদিগের সহিত এই নূতন সম্প্রদায়ের অনুযায়ী লোকদিগের অত্যন্ত বিরোধ ছিল।
- ↑ যেখানে রাজা নাই সর্ব্বসাধারণ লোকের মতানুসারে যাবতীয় রাজকার্য্য নির্ব্বাহ হয় তাহাকে সর্ব্বতন্ত্র বলে। সর্ব্ব—সর্ব্বসাধারণ, তন্ত্র—রাজ্যচিন্তা।