পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সিংহ ও তিন বৃষ তিন বৃষের পরস্পর অতিশয় সম্প্রীতি ছিল। তাহারা নিয়ত, এক মাঠে, এক সঙ্গে, চরিয়৷ বেড়াইত। এক সিংহ সৰ্ব্বদাই এই ইচ্ছা করিত, এই তিন বৃষের প্রাণবধ করিয়া, মাংস ভক্ষণ করিব। কিন্তু, উহার এমন বলবান যে, তিন একত্র থাকিলে, সিংহ, আক্রমণ করিয়া, কিছু করিতে পারে না। এজন্য, সে মনে মনে বিবেচনা করিল, যাহাতে ইহারা পৃথক পৃথক চরে, এমন কোনও উপায় করি। পরে, কৌশল করিয়া, সে উহাদের মধ্যে এমন বিরোধ ঘটাইয়া দিল যে, তিনের আর পরস্পর মুখ দেখাদেখি পৰ্য্যন্ত রহিল না। তখন তাহার, পরস্পর দূরে, পৃথক পৃথক স্থানে, চরিতে আরম্ভ করিল। সিংহও, এই সুযোগ পাইয়া, একে একে, তিনের প্রাণসংহার করিয়া, ইচ্ছামত আহার করিল। বন্ধুদিগের পরস্পর বিরোধ শক্রর আনন্দের নিমিত্ত। শৃগাল ও সারস এক দিবস, এক শৃগাল এক সারসকে বলিল, ভাই। কাল তোমায় আমার আলয়ে আহার করিতে হইবেক । সারস সম্মত, ও পর দিন, যথাকালে, শৃগালের আলয়ে উপস্থিত, হইল। উপহাস করিয়া, আমোদ করিবার নিমিত্ত, শৃগাল, অন্য কোনও আয়োজন না করিয়া, থালায় কিঞ্চিৎ ঝোল ঢালিয়া, সারসকে আহার করিতে বলিল, এবং আপনিও আহার করিতে বসিল। শৃগাল, জিহা দ্বারা, অনায়াসেই, থালার ঝোল চাটিয়া খাইতে লাগিল। কিন্তু, সারসের ঠোট অতিশয় সরু ও লম্বা ; সুতরাং, সে কিছুই আহার করিতে পারিল না, চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। আহারে বসিবার সময়, তাহার যেরূপ ক্ষুধা ছিল, সেইরূপই রহিল, কিছুমাত্র নিবৃত্ত হইল না। সারসকে আহারে বিরত দেখিয়া, শৃগাল ক্ষোভপ্রকাশ করিয়া কাহল, ভাই ! তুমি ভাল করিয়া আহার করিলে না ; ইহাতে আমি অতিশয় দুঃখিত হইলাম। বোধ করি, আহারের দ্রব্য সুস্বাদ হয় নাই, তাই ভাল করিয়া আহার করিলে না। সারস শুনিয়া, উপহাস বুঝিতে পারিয়া, তখন কোনও উক্তি করিল না ; কিন্তু, শৃগালকে জব্দ করিবার