পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
ভগবতী দেবী

ভগবচ্চিন্তায় দিনযাপন করিতে লাগিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ও সংসারের জন্য অর্থব্যয়ের ভার পিতার উপর এবং পরিবারে গৃহিণীপনার ভার জননীর উপর অর্পণ করিয়া নিশ্চিন্ত রহিলেন। মাতাপিতাও উপযুক্ত পুত্রের অনভিমত কোন কর্ম্ম প্রাণান্তেেও করিতেন না। পরস্পরের মধ্যে এইরূপ দায়িত্বজ্ঞান ছিল বলিয়াই ঐ একান্নবর্ত্তী পরিবারের গার্হস্থ্য ধর্ম্মসাধনে কোন প্রকার অন্তরায় উপস্থিত হয় নাই।

 ন্যায়পরাণতা পারিবারিক শান্তি ও উন্নতির প্রতিভূ-স্বরূপ। একান্নবর্ত্তী পরিবার মধ্যে বাস করিতে হইলেই প্রবল ও দুর্ব্বল, স্বার্থপর ও পরার্থপরায়ণ, কোপন এবং ক্ষমাশীল, এবম্বিধ বিবিধ প্রকার অবস্থা ও চরিত্রশালী বহু লোককে একত্র অবস্থিতি করিতে হয়। ন্যায়জ্ঞান যদি মানুষের স্বাভাবিক না হইত, ন্যায়ান্যায় বিচার দ্বারা যদি পরিবার পরিচালিত না হইত, তাহা হইলে অত্যাচার, অপচয় এবং বাদ বিসংবাদে উহা উৎসন্ন হইয়া যাইত। একান্নবর্ত্তী বৃহৎ পরিবারে সদ্য যে সকল অসুবিধা সংঘটনের সম্ভাবনা, ঠাকুরদাসের গৃহে সেরাপ অসুবিধার অভাব ছিল না। কিন্তু তাঁহার ন্যায়দণ্ডের তুলাবিধানে সে সকল অসুুবিধা ও অভিযোগ জলবিম্ববৎ উৎপত্তি মাত্রই লয় প্রাপ্ত হইত। এইরূপে ঠাকুরদাস গৃহকর্ত্তারূপে স্বীয় পরিবারের এবং অভিভাবকরূপে প্রতিবেশিগণের তত্ত্বাবধান করিতে আরম্ভ করিলেন এবং ভগবতী দেবী গৃহিণীরূপে গৃহের ও হিতৈষীণীরপে প্রতিবেশিগণের সেবা শুশ্রূষায় নিয়ত নিরত হইলেন এবং তাঁহার পারিবারিক জীবনেরও সূচনা হইল।

 বর্ত্তমান এবং ভবিষ্যৎ সুখ ও মঙ্গল সাধনের জন্যই মানুষ সংসারযাত্রা আরম্ভ করে। কিন্তু মানুষের আত্মকর্ম্মফলে সেই সুখ ও মঙ্গল লাভের কতকগুলি অন্তরায় ঘটিয়া থাকে। আলস্য পারিবারিক সুখ নাশের এক প্রধান হেতু। আলস্য দারিদ্র্যের মুলীভূত কারণ এবং চরিত্র-শিথিলতার নিত্যসহচর। দারিদ্র্য নানা দুঃখের জন্মদাতা, মনুষ্যের মনুষ্যত্বনাশক, এবং জনসমাজের শক্তি ও পবিত্রতার মুলোৎপাটক। এই গুণরাশিনাশী দারিদ্র্যের এক প্রধান কারণ আলস্য। কেবল দারিদ্রতারই উৎপাদক নহে। সংসারের মধ্যে এক ব্যক্তি অলস হইলে, তাহাকে অপর ব্যক্তির গলগ্রহ হইতে হয়, অপর ব্যক্তি বা ব্যক্তিদিগকে তাহার করণীয় পরিশ্রমের ভার বহন করিতে হয়। ইহাতেও বহুস্থলে মনোভঙ্গ হইয়া থাকে।

 অক্ষমা পারিবারিক শান্তিভঙ্গের অন্য এক প্রধান কারণ। পরস্পরের সুখদুঃখের ভাগী হইয়া, যে কতকগুলি লোক এক পরিবারভুক্ত হইয়া থাকে, তাহাদিগের মধ্যে বিশেষ সহিষ্ণুতার প্রয়োজন। একপরিবারস্থ জনগণের পদেপদে পরস্পরের ইচ্ছা, রুচি ও স্বচ্ছন্দতার বিরোধী হইবার সম্ভাবনা। অতএব যাহাতে মনোভদের কারণ না ঘটে, তদ্বিষয়ে যেমন সাবধান হওয়া আবশ্যক, তেমনই আবার ক্ষমাশীল হইতে যত্ন করাও সর্ব্বতোভাবে কর্ত্তব্য। উগ্রস্বভাবই অসহিষ্ণুতার কারণ। ক্ষমা-