পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।



উপক্রমণিকা।

 রামজয় অতি বুদ্ধিমান, বলশালী ও সাহসী পুরুষ ছিলেন। লৌহযষ্টি হস্তে লইয়া সর্বত্র ভ্রমণ করিতেন, কাহাকেও ভয় করিতেন না। এক সময় বীরসিংহ হইতে মেদিনীপুর যাইতেছেন, পথিমধ্যে এক ভল্লু‌ক দেখিতে পাইলেন। ভল্লুক দেখিয়া ভয় না পাইয়া, এক বৃক্ষের অন্তরালে দণ্ডায়মান হইলে, ভল্লু‌ক তাঁহাকে আক্রমণ করিবার জন্য বৃক্ষের চতুর্দিকে তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ঘূর্ণ্যমান হওয়ায়, তিনিও অগ্রে অগ্রে ঘুরিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে ভল্লুক দুই হস্ত প্রসারণপূর্ব্ব‌ক বৃক্ষটী আঁকড়াইয়া, তাহাকে ধরিবার চেষ্টা করিল; ঐ সময় রামজয়, বৃক্ষের অপর পার্শ্ব হইতে ভালুকের দুই হস্ত ধরিয়া বৃক্ষে ঘর্ষণ করিতে আরম্ভ করিলেন। তাহাতে ভল্লু‌ক মৃতপ্রায় হইলে ছাড়িয়া দিলেন। ভল্লু‌ককে মৃতকল্প ভূপতিত দেখিয়া, প্রস্থান করিতে উদ্যত হইলেন এমন সময় ভল্লু‌ক উঠিয়া দ্রুতবেগে দৌড়িয়া গিয়া, রামজয়ের পৃষ্ঠে নখাঘাত করিল; তখন পৃষ্ঠে শোণিতধারা বিনিৰ্গত দেখিয়া, ক্রোধাভরে লৌহদণ্ডপ্রহারে ভল্লু‌কের প্রাণবিনাশ করিলেন। ভল্লুকের পাঁচটী নখাঘাতের ক্ষতে প্রায় মাসাধিক কষ্ট পাইয়া পরে আরোগ্যলাভ করেন।

 বীরসিংহায় বাস্তু-বাটীর ভূস্বামী, রামজয়কে নিষ্কর ব্রহ্মোত্তর করিয়া দিবেন মানস করিয়াছিলেন; কিন্তু রামজয় দান গ্রহণ করিতে সম্মত হন নাই। গ্রামের অনেকেই নাখরাজ করিবার জন্য তাঁহাকে অনেক উপদেশ দিয়াছিলেন, কিন্তু কাহারও অনুরোধ রক্ষা করেন নাই। তদবধি বাস্তুভূমির ৯|৴০ টাকা কর আদায় হইয়া আসিতেছে। রামজয়ের মনোগত ভাব এই যে, নিষ্করে বাস করিলে, ভুস্বামী পুণ্যের অংশ গ্রহণ করিতে পরিবেন এবং তিনি আজন্মকাল মনে মনে অহঙ্কার করিতে পরিবেন যে, আমি উহাকে চিরকালের জন্য বাসস্থান দান করিয়াছি; একারণ নিষ্করে বাস করিতে সম্মত হইলেন না।

 ঠাকুরদাসের বাঙ্গালা, শ্যাখতি ও জমিদারী কাগজ শিক্ষা হইয়াছে দেখিয়া, রামজয়, ঠাকুরদাসকে সমভিব্যাহাৱে লইয়া কলিকাতা যাত্রা করিলেন। তথায় বাগবাজারস্থ সঙ্গতিপন্ন জ্ঞাতি সভারাম বাচস্পতির ভবনে উপস্থিত হইলে,