পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

তুমি অমুকের উপাসনা না করিয়া, কি জন্য অমুকের উপাসনা করিলে? উপাসক বলিলেন, আমার অপরাধ নাই, অমুক ধর্ম্ম-প্রচারক আমাকে যেরূপ উপদেশ দিয়াছেন, আমি তদনুসারে কার্য্য করিয়াছি। এই কথায় মৃত্যুরাজ, উপাসকের প্রতি পাঁচ বেতের আদেশ দিয়া, তাহাকে এক সন্নিহিত বৃক্ষতলে রাখিতে বলিলেন। এইরূপ তিন চারি জন উপাসককে দণ্ড দিবার পর, আপনার মত একজন ধর্ম্ম-প্রচারক আনীত হইলেন। ঐ ধর্ম্মপ্রচারককে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলিলেন, বিদ্যাসাগরের উপদেশানুসারে আমি অমুক উপাসনা করিয়াছি এবং অনুগামী ব্যক্তিদিগকেও ঐ উপাসনার উপদেশ দিয়াছি। মৃত্যুরাজ, প্রথমতঃ তাঁহার নিজের হিসাবে পাঁচ বেত দিয়া, অনুগামী উপাসকদিগকে আনাইয়া, প্রত্যেকের হিসাবে পাঁচ পাঁচ বেতের আদেশ দেন। এরূপ দুই তিন জন প্রচারকের পর, আমিও মৃত্যুরাজের সম্মুখে নীত হইলাম। প্রথমতঃ আমাকে নিজের হিসাবে পাঁচ বেত দিয়া, প্রত্যেক উপাসক ও প্রত্যেক প্রচারকের হিসাবে পাঁচ পাঁচ বেত হুকুম দিলেন। ইহাতে আমার শরীরে তিলাৰ্দ্ধ স্থান রহিল না; তথাপি বহুসংখ্যক বেত বাকী রহিল এবং অবশিষ্ট বেত শেষ না হওয়া পর্য্যন্ত প্রত্যহ বেত খাইতে হইল।” এই কথার পর বিদ্যাসাগর মহাশয় বলিলেন, “আমার বোধ হয় যে, পৃথিবীর প্রারম্ভ হইতে এরূপ তর্ক চলিতেছে ও যাবৎ পৃথিবী থাকিবে, তাবৎ এই তর্ক থাকিবে; কস্মিনকালেও ইহার মীমাংসা হইবে না। তাহার দৃষ্টান্ত দেখুন, মহাভারতে বেদব্যাস লিখিয়াছেন, বকরূপী ধর্ম্মরাজ, এই মর্ম্মে ধর্ম্মপুত্র রাজা যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞাসা করিলে, যুধিষ্ঠির উত্তর করিলেন।

 বেদা বিভিন্নাঃ স্মৃতয়ো বিভিন্নাঃ নাসৌ মুনির্যস্য মতং ন ভিন্নং।

 ধর্ম্মস্য তত্ত্বং নিহিতং গুহায়াং মহাজনো যেন গতঃ স পন্থাঃ॥”