পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



চাকরি।
৫৭

ব্যাকরণ পড়াইতেন। ব্যাকরণ শিখাইবার এমন কৌশল জানিতেন যে, এক বৎসরের মধ্যেই অনেকে ব্যাকরণ সমাপ্ত করিয়া, কাব্য অধ্যয়ন করিতে সক্ষম হইতেন। একারণ, ক্রমশঃ প্রাতে ও সায়ংকালে অনেক বিষয়ী-লোক, সংস্কৃত শিখিবার মানসে আমাদের বাসায় উপস্থিত হইয়া, প্রত্যহ সংস্কৃত শিক্ষা করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিল। ক্রমশঃ বাসায় ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি হইতে লাগিল। নিজে ইংরাজী পড়িতেন, তথাপি অপর যে সমস্ত লোক সংস্কৃত শিক্ষা করিতে আসিতেন, তাহদের প্রতি কখনও ক্ষণকালের জন্য বিরক্তিভাব প্রকাশ করিতেন না। তিনি বাল্যকাল হইতে জ্ঞানদানকার্য্যে কখন পরামুখ ছিলেন না। যে সকল লোক সর্ব্বদা বাসায় আসিতেন, তাঁহারা পরস্পর মনে করিতেন যে, ঈশ্বরের আমরাই পরম বন্ধু ও আত্মীয়। কিন্তু আমরা দেখিতাম, কি আত্মীয় কি শক্র সকলের প্রতি তিনি সমভাব প্রকাশ করিতেন।

 ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে নিযুক্ত হইবার অব্যবহিত পরে, তত্ত্ববোধিনী সভার বিখ্যাত লেখক বাবু অক্ষয়কুমার দত্ত, প্রত্যহ সন্ধ্যার পুর উক্ত সভায় যে সকল প্রবন্ধ প্রচার হইবে, তাহা অগ্রজ মহাশয়ের নিকট পাঠ করিয়া শুনাইতেন। অগ্রজ মহাশয়ের অভিপ্রায় অনুসারে অনেক স্থল পরিবর্ত্তিত ও পরিত্যক্ত হইত। তাঁহার রচিত বাহ্য‌-বস্তুর সহিত মানব-প্রকৃতির সম্বন্ধ-বিচার নামক পুস্তক যৎকালে ইংরাজী হইতে বঙ্গভাষায় অনুবাদিত হয়, তৎকালে তিনি ঐ পুস্তক অগ্রজ মহাশয়ের নিকট আদ্যোপান্ত দেখাইয়া লইয়াছিলেন, এবং যে সকল দুরূহ শব্দ বাঙ্গালায় লিখিতে অক্ষম হইয়াছিলেন, তাহা নূতন প্রণালীতে তাঁহার দ্বারা রচনা করাইয়া লইয়াছিলেন। ফলতঃ বাহ-বস্তুর সহিত মানব-প্রকৃতির সম্বন্ধ-বিচার পুস্তক যে, সকলের আদরের বস্তু হইয়াছে, তাহা অগ্রজ মহাশয়ের সংশোধন-প্রণালীর ফল, ইহা সকলেই মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেন। তিনি আদ্যোপান্ত সংশোধন করিয়া না দিলে, অক্ষয়বাবুর ঐ পুস্তক সহজে সাধারণের বোধগম্য হইত না। এতদ্ব্যতীত