পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

হইতে লাগিল। এক বেতালপঞ্চবিংশতি লিখিয়া, বাঙ্গালাদেশের মধ্যে তাঁহার অদ্বিতীয় নাম প্রকাশিত হইল। বেতালপঞ্চবিংশতি পুস্তকে অতি সুমধুর পদবিন্যাস হইয়াছিল। তৎকালে বেতালপঞ্চবিংশতির বাঙ্গালা পাঠ করিবার জন্য, সকল সম্প্রদায়ের লোকের আন্তরিক ইচ্ছা হইয়াছিল। এই পুস্তকের বাঙ্গালা পাঠ করিয়া, তৎকালীন সংস্কৃত-কলেজের ও অন্যান্য বিদ্যালয়ের বালকবৃন্দ বাঙ্গালা লিখিতে শিক্ষা করিতেন। অগ্রজ মহাশয়, বাঙ্গালা-ভাষা শিক্ষার আদি-পথপ্রদর্শক, ইহা সকলকেই মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিতে হইবে। তিনিই প্রচলিত বাঙ্গালা-ভাষা লিখিবার ও শিক্ষা করিবার আদি-গুরুস্বরূপ। ঐ সময়ে কি সংস্কৃত, কি ইংরাজী, সকল বিদ্যালয়ের ছাত্রগণ, অনেকেই বেতালপঞ্চবিংশতি পুনঃ পুনঃ অধ্যয়ন করিয়া কণ্ঠস্থ করিয়াছিল; ইহার কারণ এই যে, বাঙ্গালা রচনা বা অনুবাদ করিবার সময়, বেতালপঞ্চবিংশতির কোন কোন স্থলের অবিকল পঙক্তি লিখিয়া দিত।

 ইহার কিয়দিবস পরে, সিরাজদ্দৌলার সিংহাসনাধিরোহণ হইতে ইংরাজদের অধিকার পর্য্যন্ত, মার্শমান সাহেবের হিষ্টিরি অব বেঙ্গল, অর্থাৎ বাঙ্গালার ইতিহাস, প্রাঞ্জল দেশীয় ভাষায় অনুবাদ করিয়া মুদ্রিত করেন। তৎকালে বাঙ্গালার ইতিহাস সকলেই সমাদরপূর্বক গ্রহণ করিয়াছিল। স্বল্পদিনের মধ্যেই সমুদয় পুস্তক নিঃশেষ হইয়া যায়। ইহার কয়েক মাস পরে অর্থাৎ সন ১২৫৬ সালের ২৬শে ভাদ্র জীবনচরিত নামক পুস্তক মুদ্রিত ও প্রচারিত করিলেন। রবার্ট উইলিয়ম চেম্বর্স, বহুসংখ্যক সুপ্রসিদ্ধ মহানুভবদিগের বৃত্তান্ত সঙ্কলন করিয়া, ইংরাজি-ভাষায় যে জীবনচরিত পুস্তক প্রচার করিয়াছেন, তন্মধ্য হইতে কেবল কোপর্নিকস, গ্যালিলিয়, নিউটন, হর্শেল প্রভৃতি কয়েকটা মহানুভবের চরিত, ইংরাজী ভাষা হইতে বাঙ্গালা ভাষায় অনুবাদ করিয়া, এই ‘পুস্তক প্রকাশ করিয়াছিলেন। ইতিপূর্বে এতদ্দেশীয় কেহ কখন এরূপ জীবনচরিত সঙ্কলন বা অনুবাদ করেন। নাই। বিশেষতঃ এতদ্দেশে এরূপ জীবনচরিত লিখিবার প্রথা পুর্ব্বে প্রচলিত ছিল না। ইউরোপীয়দের ন্যায়