পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
বিদ্যাসাগর।

 “কর্ত্তব্যোমহদাশ্রয়, মহাজনের এই মহাবাণী অবশ্যপালনীয়। এ বাণীর সাক্ষাৎ ফল প্রত্যক্ষীভূত হইয়াছিল, ঈশ্বরচন্দ্রের বাল্য জীবনে। জগদদুর্লভ সিংহ কেবল যে পিতাপুত্রকে আশ্রয় মাত্র দিয়াছিলেন, তাহা নহে; তাহার পরিবাববর্গ ও তিনি স্বয়ং তাহাদিগকে যথেষ্ট সমাদর করিতেন। জগদদুৰ্লভ বাবুর কনিষ্ঠা ভগিনী রাইমণি, বালক ঈশ্বরচন্দ্রকে পুত্রপেক্ষা ভালবাসিতেন। এই রমণী সম্বন্ধে বিদ্যাসাগর মহাশয় স্বয়ং বলিয়াছেন,—“স্নেহ, দয়া, সৌজন্য, অমায়িকতা, সদ্বিবেচনাপ্রভৃতি সদগুণ বিষয়ে, রাইমণির সমকক্ষ স্ত্রীলোক এ পর্য্যন্ত আমার নয়ন-গোচর হয় নাই। এই দয়াময়ীর সৌম্য মূর্ত্তি, আমার হৃদয়মন্দিরে দেবীমূর্ত্তির ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হইয়া বিরাজমান রহিয়াছে।” প্রসঙ্গক্রমে তাঁহার কথা উত্থাপিত হইলে, তদীয় অকৃত্রিম গুণের কীর্ত্তন করিতে করিতে বিদ্যাসাগর মহাশয় অশ্রুপাত না করিয়া থাকিতে পারিতেন না।

 বাস্তবিক রাইমণির সেই অকৃত্রিম যত্ন-স্নেহ ব্যতিরেকে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কলিকাতায় থাকা দায় হইত। তিনি স্নেহময়ী মাতা ও পিতামহীর কথা ভাবিয়া প্রথম প্রথম বড় ব্যাকুল হইতেন। পিতা সর্ব্বক্ষণ তাঁহার নিকট থাকিতে পারিতেন না। তিনি প্রাতে একপ্রহরের সময় কর্ম্মস্থানে যাইতেন এবং রাত্রি এক প্রহরের সময় বাসায় ফিরিয়া আসিতেন। এই সময় রাইমণি এবং জগদদুর্লভ বাবুর অন্যান্য পরিবার নানা মিষ্ট কথায় ঈশ্বরচন্দ্রকে ভুলাইয় রাখিতেন এবং নানাবিধ আহারীয় ও অন্যান্য মন-ভুলান জিনিষপত্র দিয়া অনেকটা সান্ত্বনা করিতেন। এইরূপ অনেক দীনহীন বালক মহাপ্রয়ে প্রীতিস্নেহে প্রতিপালিত হইষা পরিণামে