পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

বিশ্ব-নীতির জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। ভারতের মৌর্য্য, গুপ্ত ও মুঘল সামাজ্যের ক্ষেত্রেও এই নীতির ব্যতিক্রম হয় নাই। বিশ্বের ইতিহাসের এই সমস্ত দৃষ্টান্তের পরেও, ব্রিটীশ সামাজ্যের ভিন্নরূপ পরিণতি হইবে, ইহা বলিতে কেহ সাহসী হইবেন কি? ইতিহাসের চৌমুহনী রাজপথে আজ ব্রিটীশ সাম্রাজ্য দণ্ডায়মান, ইহাকে অন্যান্য সাম্রাজ্যসমূহের পন্থানুসরণ করিতে হইবে, অথবা স্বাধীন জাতিসমূহের স্বেচ্ছাগঠিত যুক্তরাষ্ট্রে পরিণত হইতে হইবে। এই দুইটির যে কোন পন্থাই ইহার জন্য উন্মুক্ত রহিয়াছে। ১৯১৭ খৃষ্টাব্দে জারের সাম্রাজ্য ধ্বংস হইয়াছে এবং সেই ধ্বংসস্তুপের ভস্মরাশি হইতেই পুনরায় সােভিয়েট রাশিয়া গড়িয়া উঠিয়াছে। গ্রেট বৃটেনের পক্ষে রাশিয়ার ইতিহাস হইতে শিক্ষালাভের এখনও অবকাশ রহিয়াছে। বৃটেন ইহার সুযােগ গ্রহণ করিবে কি? ব্রিটীশ সাম্রাজ্য আজ নানাবিধ প্রভাবে প্রপীড়িত। বর্ত্তমানে বৃটেন ‘সমুদ্রের রাণী’ বলিয়া গর্ব্ব করিতে পারে না। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে নৌ-শক্তির বলেই বৃটেনের অভ্যুত্থান হইয়াছিল। বিমান-শক্তির অভাবেই বিংশ শতাব্দীতে বৃটেনের প্রাধান্য বিনষ্ট হইয়াছে এবং বিশ্বরাজনীতি-ক্ষেত্রে ক্ষমতার সামঞ্জস্য রক্ষার নীতি গুরুতররূপে পর্য্যুদস্ত হইয়াছে। বিরাট ব্রিটীশ সাম্রাজ্যের ভিত্তিমূল আজ যেরূপ শিথিল হইয়াছে পূর্ব্বে কখনও এইরূপ হয় নাই।

 ভারতবর্ষের সুযােগ—বিশ্বশক্তিসমূহের বর্ত্তমান ঘাত-প্রতি ঘাত—বিশ্ব-পরিস্থিতির এই সঙ্কট মুহূর্ত্তে ভারতবর্ষ আজ নবতর শক্তি সঞ্চয় করিয়াছে। বিরাট মহাদেশ-সদৃশ আমাদের জন্মভূমিতে পঁয়ত্রিশ কোটি লােকের বাস। দেশের এই বিপুল লােকসংখ্যা ও বিরাট পরিধি এতাবৎকাল আমাদের দুর্ব্বলতার কারণ ছিল। আজ যদি সম্মিলিত হইয়া আমরা শাসকসম্প্রদায়ের সম্মুখীন হইতে পারি, তবে উহা আমাদের বর্দ্ধিত শক্তিরই প্রমাণ দিবে। ভারতের এই ঐক্যের বিষয় উল্লেখের সময়