পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

অধিকতর প্রবল ছিল। ধর্ম্মভাবাপন্থ কতিপয় ছাত্রের সান্নিধ্যে ইহা আরও বৃদ্ধি পায়। সন্ন্যাস গ্রহণের তীব্র ইচ্ছা সুভাষচন্দ্রের মনকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে। অবশেষে ধর্ম্ম জীবন যাপনের বাসনা তাঁহাকে এরূপ অভিভূত করে যে হঠাৎ একদিন তিনি গৃহত্যাগ করিয়া পথে বাহির হইয়া পড়েন। উপযুক্ত গুরুর সন্ধানে প্রথমে তিনি হরিদ্বারে আসেন। এখানে হেমন্তকুমারের সহিত মিলিত হন এবং উভয়ে হিমালয়ে যাত্রা করেন। এই উপলক্ষে তিনি দিল্লী, আগ্রা, মথুরা, বৃন্দাবন, কাশী, গয়া প্রভৃতি স্থান পরিভ্রমণ করেন। আগ্রাতে প্রেমানন্দ বাবাজী নামে এক উচ্চশিক্ষিত ও সদালাপী সন্ন্যাসীর সহিত তিনি পরিচিত হন। ইনি গৃহস্থাশ্রমীদের ন্যায় জীবন যাপন করিতেন। তাঁহার এই জীবনযাত্রাপ্রণালী সুভাষচন্দ্রের মনঃপূত হইল না। তৎপর সুভাষচন্দ্র হেমন্তকুমারের সহিত বৃন্দাবনে উপস্থিত হইলে স্বর্গতঃ বনমালীরায় বাহাদুর তাঁহাদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করিয়া দেন। সেখানে সুভাষচন্দ্র বাবাজীদের সহিত বৈষ্ণবশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। পরম সাধু রামকৃষ্ণদাস বাবাজী ইঁহাদের মনীষা ও ধীশক্তির পরিচয় পাইয়া মুগ্ধ হন এবং বারানসীতে গিয়া জ্ঞানমার্গের চর্চ্চা করিতে পরামর্শ দেন। তদনুসারে বারানসীতে তাঁহারা কিছুদিন রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ ব্রহ্মানন্দস্বামী ওরফে রাখাল মহারাজের সহিত অবস্থান করেন। কলিকাতায় সুভাষচন্দ্র যখন দক্ষিণেশ্বর ও বেলুড় যাতায়াত করিতেন সেই সময় হইতেই রাখাল মহারাজ তাঁহাকে চিনিতেন। এখন তিনি তাঁহাদিগকে উপদেশ দিলেন—তোমরা বাপ মাকে না বলিয়া পলাইয়া আসিয়াছ, বাড়ি ফিরিয়া যাও। সুভাষচন্দ্র তাঁহার বন্ধুর সহিত বারানসী ত্যাগ করিয়া বৌদ্ধ গয়ায় আসিয়া উপস্থিত হন।

 বহু সাধু সন্ন্যাসীর সংস্পর্শে আসিয়া সুভাষচন্দ্রের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয় যে, সাধু সন্ন্যাসীদের অনেকেই নিছক বিলাসিতায় জীবন