পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

 সেদিন দুপুরে পিতাপুত্রে অনেক গভীর তত্ত্বের আলোচনা হইল। পিতা বুঝাইতে চাহিলেন, সংসারে থাকিয়াও ধর্ম্মজীবন যাপন করা চলে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ, ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র, রামকৃষ্ণ পরমহংস ইঁহারা সংসার ধর্ম্মী ছিলেন, সংসারের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব আছে তাহা পালন করা সকলেরই কর্ত্তব্য। পুত্র যুক্তি দেখাইলেন, “সকলের পক্ষে এক ঔষধ নয়। কারণ, সকলের এক রোগ, এক সামর্থ্য নয়। কর্ত্তব্যটা Relative, higher call এলে lower call ভেসে যায়—জ্ঞান এলে কর্ম্মনাশ হয়। বিবেকানন্দের আদর্শই হচ্ছে আমার আদর্শ।” অবশেষে পিতা বলিলেন, ‘আচ্ছা, যখন তোমার higher call আসিবে তখন আমরা দেখিব।’ পূর্ব্ব অনুচ্ছেদে উদ্ধৃত পত্রাংশের উপসংহারে সুভাষচন্দ্র লিখিয়াছেন, ‘Next timeএ চলিয়া গেলে বাবা বোধ হয় আর ফিরাইবার চেষ্টা ও সঙ্কল্প পরিত্যাগ করিবেন। মা বলেন, আবারও যদি যায়, আমি আর বাঁচিব না। তাঁহাকে বুঝাইবার চেষ্টা সফল হইবে না বলিয়া বোধ হয়। বাবাকে দেখিলাম খুব reasonable, যাই হোক ফিরিয়া আসায় ভাল হইয়াছে এখন দেখিতেছি।”

 তপশ্চর্য্যা ও যোগসাধনার দ্বারা আত্মিক শক্তি বিকাশের উপর সুভাষচন্দ্রের বিশ্বাস চিরদিন অটুট থাকিলেও পরবর্ত্তী জীবনে তিনি সন্ন্যাস ধর্ম্ম গ্রহণের ইচ্ছাকে সমাজ বিরোধী (anti-social) বৃত্তির প্রভাব বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। কেবল ব্যক্তিত্বের বিকাশই নয়—সামাজিক বৃত্তির ও বিকাশ হওয়া চাই। ভারতবাসী যে আন্তর্জ্জাতিক প্রতিযোগিতায় হারিয়া স্বাধীনতা হারাইয়াছে তাহার প্রধান কারণ আমাদের সামাজিক বৃত্তির অভাব। এই সামাজিক বৃত্তির অভাব ঘটিয়াছে বলিয়াই আমরা সংঘবদ্ধ ভাবে কাজ করিবার শক্তি ও অভ্যাস হারাইয়া ফেলিয়াছি। বৈরাগ্য সাধনের দ্বারা যে মুক্তি তাহা সমাজ ও রাষ্ট্রের সংগঠনকে দুর্ব্বল করে। এই প্রসংগে ১৯২৯ সালে যশোহর-খুলনা যুব সম্মিলনীতে