পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- বহুবিবাহ br\ని খ্যাতির অনুরোধে আমরা সেই ਸਿਰੇ যথাৰ্থ বলিয়া গ্ৰহণ করিলাম। GfK IsfUSS হুগলি জেলার সমুদায় লোকের মধ্যে কয়জন বহুবিবাহপরায়ণ পাওয়া यांश ( qछे বাঙ্গালায় এক কোটি আশী লক্ষ হিন্দু বাস করে ; ইহার মধ্যে আঠার শত জন ব্যক্তিও যে অধিবেদনপরায়ণ নহে, ইহা নিশ্চিত বলা যাইতে পারে। অর্থাৎ দশ সহস্ৰ হিন্দুর মধ্যে একজনও অধিবেদনপরায়ণ কি না। সন্দেহ। এই অল্পসংখ্যকদিগের সংখ্যাও যে দিন দিন কমিতেছে, স্বতঃই কমিতেছে, তাহাও সকলে জানেন। কাহারও কোন উদ্যোগ করিতে হইতেছে না-কোন রাজব্যবস্থার আবশ্যক হইতেছে না-কোন পণ্ডিতের ব্যবস্থার আবশ্যক হইতেছে না, আপনা হইতেই কমিতেছে। ইহা দেখিয়া অনেকেই ভরসা করেন যে, এই কুপ্রথার যাহা কিছু অবশিষ্ট আছে, তাহা আপনা হইতেই কমিবে। এমত অবস্থায় বহুবিবাহরূপ রাক্ষসবধের জন্য বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ন্যায় মহারথীকে ধৃতাস্ত্র দেখিয়া অনেকেরই ডনকুইক্সোটুকে মনে পড়িবে। কিন্তু সে রাক্ষস বধ্য, তাহাতে সন্দেহ নাই। মুমূর্ব হইলেও বধ্য। আমরা দেখিয়াছি, এক এক জন বীরপুরুষ, মৃত সৰ্প বা মৃত কুকুর দেখিলেই তাহার উপর দুই এক ঘা লাঠি মারিয়া যান ; কি জানি, যদি ভাল করিয়া না মরিয়া থাকে। আমাদিগের বিবেচনায় ইহারা বড় সাবধান এবং পরোপকারী। যিনি এই মুমূর্ষ রাক্ষসের মৃত্যুকালে দুই এক ঘা লাঠি মারিয়া যাইতে পারিবেন, তিনি ইহলোকে পূজ্য এবং পরলোকে সদগতি প্ৰাপ্ত হইবেন সন্দেহ নাই । কিন্তু একটা কথায় একটু গোলযোগ বোধ হয়। আমরা স্বীকার করিলাম, বহুবিবাহ এ দেশে বড়ই চলিত—আপামর সাধারণ সকলেই বহুপত্নীক। জিজ্ঞাস্য এই, এ প্ৰথা কি প্রকারে নিবারিত হওয়া সম্ভব ? বিদ্যাসাগর মহাশয় যে সকল উপায় অবলম্বন করিতে ইচ্ছুক, বহুবিবাহের অশাস্ত্রীয়তা প্ৰমাণ করা তাহার একটি প্রধান। বাস্তবিক এই প্রথা শাস্ত্ৰবিরুদ্ধ কি না, তাহা আমরা বলিতে পারি না ; কেন না, পূৰ্ব্বজন্মাজ্জিত পুণ্যাবলে ধৰ্ম্মশাস্ত্র সম্বন্ধে আমরা ঘোরতর মুর্থ। দেখা যাইতেছে যে, এ বিষয়ে মতভেদ আছে। তবে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের উদ্যম, পুস্তকের আকার, এবং স্মৃতিশাস্ত্ৰোদ্ধত বচনের আড়ম্বর দেখিয়া আমরা তাহার পক্ষ অবলম্বন করিতে প্ৰস্তুত আছি। মনে করুন, দেশশুদ্ধ লোক সকলেই স্বীকার করিল যে, বহুবিবাহ প্ৰাচীন হিন্দুশাস্ত্ৰ-বিরুদ্ধ। তাহাতে কি বহুবিবাহ প্ৰথী নিবারিত হইবে ? আমরা সে বিষয়ে বিশেষ সংশয়াবিষ্ট। বঙ্গীয় হিন্দুসমাজে যে "কল সামাজিক প্ৰথা প্ৰচলিত আছে, তাহা সকলই শাস্ত্রসম্মত বলিয়া প্ৰচলিত, এমত নহে।