পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গদেশের কৃষক २२१ দেয় নাই, নয়। ত চারি টাকা লইয়া, দাখিলায় দুই টাকা লিখিয়া দিয়াছে। যাহা হউক, তিন টাকা বাকি স্বীকার না করিলে সে আখিরি কবচ পায় না। হয় তা তাহা না দিলে গোমস্ত সেই তিন টাকাকে তের টাকা করিয়া নালিশ করিবে। সুতরাং পরাণ মণ্ডল তিন টাকা বাকি স্বীকার করিল ; মনে কর, তিন টাকাই তাহার যথার্থ দেন। তখন গোমস্ত সুন্দ কষিল । জমীদারী নিরিখ টাকায় চারি। আনা । তিন বৎসরেও চারি অনা, এক মাসেও চারি। আনা । তিন টাকা বাকির সুদ ৮৭o আনা । পরাণ তিন টাকা বার আনা দিল। পরে চৈত্র কিস্তি তিন টাকা দিল । তাহার পর গোমস্তার হিসাবান । তাহা টাকায় দুই পয়সা । পরাণ মণ্ডল ৩২ টাকার জমা রাখে। তাহাকে হিসাবান ১ টাকা দিতে হইল। তাহার পর পাৰ্ব্বণী । নাএব। গোমস্তা, তহশীলদার, মুহুরী, পাইক, সকলেই পাৰ্ব্বণীর হকদার । মোটের উপর পড়তা গ্রাম হইতে এত টাকা আদায় হইল। সকলে ভাগ করিয়া লইলেন। পরাণ মণ্ডলকে তজ্জন্য আর দুই টাকা দিতে হইল। এ সকল দৌরাত্ম্য জমীদারের অভিপ্ৰায়ানুসারে হয় না, তাহা স্বীকার করি। তিনি ইহার মধ্যে ন্যায্য খাজান এবং সুদ ভিন্ন আর কিছুই পাইলেন না, অবশিষ্ট সকল না এবং গোমস্তার উদবো গেল । সে কাহার দোষ ? জমীদার যে বেতনে দ্বারবান রাখেন, না এবেরও সেই বেতন ; গোমস্তার বেতন খানসামার বেতন অপেক্ষা কিছু কম। সুতরাং এ সব না। করিলে তাহদের দিনপাত হয় কি প্রকারে ? এ সকল জমীদারের আজ্ঞানুসারে হয় না বটে, কিন্তু তাতার কার্পণ্যের ফল ! প্ৰজার নিকট হইতে র্তাহার লোকে আপনি উদরপত্তির জন্য অপহরণ করিতেছে, তাহাতে তাহার ক্ষতি কি ? তাহার কথা কহিবার কি প্রয়োজন আছে ? তাহার পর ”আষাঢ় মাসে নববর্ষের শুভ পুণ্যাহ উপস্থিত। পরাণ পুণ্যাহের কিস্তিতে দুই টাকা খাজানা দিয়া থাকে। তাহা ত সে দিল, কিন্তু সে কেবল খাজনা । শুভ পুণ্যাহের দিনে জমীদারকে কিছু নজর দিতে হইবে। তাহাও দিল । হয় তা জমীদারেরা অনেক শরিক, প্ৰত্যেককে পৃথক পৃথক নজর দিতে হয়। তাহাও দিল । তাহার পর নাএব মহাশয় আছেন— র্তাহাকেও কিছু নজর দিতে হইবে। তাহাও দিল । পরে গোমস্ত মহাশয়েরা, তঁহাদের ন্যায্য পাওনা তাহারা পাইলেন । যে প্ৰজার অর্থ নজর দিতে দিতে ফুরাইয়া গেল-তাহার কাছে বাকি রহিল । সময়ান্তরে আদায় হইবে । পরাণ মণ্ডল সব দিয়া থুইয়া ঘরে গিয়া দেখিল, আর আহারের উপায় নাই। এ দিকে চাষের সময় উপস্থিত । তাহার খরচ আছে। কিন্তু ইহাতে পরাণ ভীত নহে। এ ত প্ৰতি বৎসরই ঘটিয়া থাকে। ভরসা মহাজন। পরাণ মহাজনের কাছে গেল । দেড়ী সুদে ধান লইয়া আসিল, আবার আগামী বৎসর তাহা সুন্দ সমেত শুধিয়া নিঃস্ব