তবে সেই রক্তগত সংস্কারই একটা প্রবল পাপবোধের সৃষ্টি করিয়া এ চরিত্রের শেষ গ্রন্থি ছিন্ন করিয়া ফেলিবে। এই সংস্কার আপনার নিরুদিদির ছিল, কিন্তু সেখানে পুরুষের প্রতি বিশ্বাসের এমন কারণ না থাকায় এবং নিরুদিদির প্রকৃতিই সম্পূর্ণ ভিন্ন বলিয়া, এই পাপবোধ পূর্ব্ব হইতেই ছিল, এবং তিনি অতি সহজভাবেই তাহার নিকট আত্মসমর্পণ করিয়াছিলেন—সেখানে এমন ট্র্যাজেডির অবকাশ ঘটে নাই। রোহিণীর স্বপ্ন ভাঙিতে বিলম্ব হয় নাই—কিন্তু সে কি স্বপ্নভঙ্গ! যাহার ভরসায় সে নিজের ভাগ্যবিধাতাকে অগ্রাহ্য করিয়াছিল— সমাজের অন্যায়কে নিজ হৃদয়ের ন্যায়সঙ্গত প্রবৃত্তির বলে সংশোধন করিতে চাহিয়াছিল—তাহার অতিদুর্ব্বল লালসাহত প্রাণের বীভৎস মূর্ত্তি প্রকাশ পাইতে বিলম্ব হইল না। সে দেখিল, গোবিন্দলাল তাহাকে ভোগের সহচরী করিয়া তাহার নারীত্বকে অপমান করিয়াছে, সে যেন তাহার নিকটে মদ্যপের পানপাত্র—তাহার দহনজ্বালা যেমন অসহ্য, তাহাকে ত্যাগ করাও তেমনই দুষ্কর। গোবিন্দলাল দিবারাত্রি তাহারই সহবাসে ভ্রমরের ধ্যানে মগ্ন রহিয়াছে, যেন নরকে নিমগ্ন থাকিয়া নষ্টস্বর্গের অনুশোচনায় অধীর হইয়াছে। রোহিণী কি ইহারই জন্য গৃহত্যাগ করিয়াছিল? রোহিণী-চরিত্রের যে পরিচয় আমরা এই উপন্যাসের প্রথম অর্দ্ধে পাই, তাহা মনে রাখিলে, সে চরিত্রের পক্ষে এইরূপ মোহভঙ্গ যে কত বড় সর্ব্বনাশ, তাহা বুঝিতে পারি। সে নিজের দুর্দ্দমনীয় নিষ্ফল বাসনা হইতে মুক্তিলাভের জন্য, নিজ আত্মার মর্য্যাদা-রক্ষার জন্য—একবার আত্মহত্যা করিয়াছিল; এই গোবিন্দলালই তাহাকে বাঁচাইয়াছিল, তাহার ইচ্ছাশক্তিকে ব্যর্থ করিয়া দিয়াছিল। আজ সেই গোবিন্দলালই তাহাকে হত্যা করিয়াছে, তাহার দেহকে
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৭৩
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬০
বিবিধ কথা