পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৃত্যু-দর্শন So a হইবে না যে, যে ব্যক্তির জীবন ধন্য হইয়াছে—তাহার মৃত্যু মৃত্যুই নয় ; বরং, মনে হইবে, ওই ব্যক্তি সৰ্ব্বজীবের মতই আজ মৃত্যুর অধীন হইল—এ মুহূর্তে তাহার নিজের পক্ষে সৰ্ব্ব কীৰ্ত্তি, সৰ্ব্ব গৌরব বৃথা ; তাহার কীর্তির জন্য জীবিতের জয়ধ্বনি করিবে, কারণ সে কীর্তির উত্তরাধিকারী তাহারা ; কিন্তু ঐ যে প্রাণ-বৃদ্ধ দ অসীম শূন্যে বিলীন হইতেছে, উহার রহিল কি ? নশ্বরতার হাত হইতে কোন কীৰ্ত্তি তাহাকে রক্ষা করিবে ? সকল মিথ্যা অভিমান, মনোগত সংস্কার ত্যাগ করিয়া মুমূর্যুর পানে চাহিয়া দেখ—তাহার মরজীবনের চরম লাঞ্ছনা, তাহার ক্ষণ-অস্তিত্বের চির-অবসান, নিয়তির নিৰ্ম্মম অট্টহাস চাক্ষুষ করিতে পারিবে । জীবনের চেয়ে বড় কি আছে ?—সেই জীবন হইতে বঞ্চিত হওয়ার যে নিদারুণ নিঃস্বতা, তাহ কি ওই ব্যক্তির পক্ষে সত্য নয় ? সে কি কাহারও চেয়ে কম হতভাগ্য ? মৃত্যুর আঘাতে তাহার মুখ কি কালিমালিপ্ত হয় নাই—তাহার মহাপ্রাণী কি শেষ মূহূৰ্ত্ত পৰ্য্যস্ত বাচিবার চেষ্টা করিবে না ? চাহিয়া দেখ—মহামনীষী মহাপুরুষ বা মহাবীরের মৃত্যুও মৃত্যু ; তাহার সেই মৃত্যুকালীন মুখচ্ছবি লক্ষ্য করিলে বুঝিতে পারিবে, মৃত্যুই চরম অভিশাপ, কোনও কীৰ্ত্তি কোনও গৌরব সে ক্ষতিপূরণ করিতে পারে না—যাইবার সময়ে তাহাকেও ভিখারীর মত যাইতে হইবে । মৃত্যুকে যথার্থরূপে উপলব্ধি করিতে হইলে হৃদয় দিয়া উপলব্ধি করিতে হয়—মস্তিষ্কের সাহায্যে, তত্ত্বজ্ঞানের দ্বারা নয়। যাহার প্রেম যত বড়, যাহার হৃদয়-বৃত্তি যত গভীর—সেই মৃত্যুকে তত সুস্পষ্ট দেখিতে পায় ; সে সহজেই আত্মসংস্কার বিসর্জন দিতে পারে বলিয়াই মৃত্যু তাহাকে ফাকি দিতে পারে না । মহাপ্রেমিক নহিলে নাস্তিক হইতে পারে > 8