২১৬ বিবিধ কথা হইয়া উঠিল, সে ইতিহাস এখনও উদ্ধার হয় নাই। যতদিন সে ইতিহাস উদ্ধার না হইতেছে ততদিন অকুমানের উপর নির্ভর করিয়া কোনরূপে একটা করকোষ্ঠী নির্ণয় করা ভিন্ন গত্যন্তর নাই । আর্য্যের ইতিহাস বাঙালীর ইতিহাস নয় ; অন্য প্রাদেশিক জাতি হইতে সৰ্ব্ববিষয়ে তাহার স্বাতন্ত্র্য অতিশয় পরিস্ফুট। বেদ-বেদাস্ত—ষড়দর্শনের মনীষা, ভাস-কালিদাস-ভবভূতির প্রতিভা, অজন্তা-কোণারক-খণ্ডগিরির শিল্পচাতুর্য্য বাঙালীর পরিচয়-পত্র নয়। গত আট শত বৎসরের বাংলা ও বাঙালীর সংস্কৃত-চর্চার ইতিহাসে তাহার যে পরিচয় আছে, এবং তাহার সম্বন্ধে যে সকল প্রাচীনতর কীৰ্ত্তির প্রবাদ বা প্রমাণ আছে, সেই সকলের সহিত—আজও পৰ্য্যন্ত তাহার ধৰ্ম্ম ও সমাজ-জীবন, পূজা-পাৰ্ব্বণ, উৎসব-অনুষ্ঠান, গান ও গাথায় তাহার জাতীয় সাধনার যে ধারাটি লুপ্ত হইয়াও হয় নাই, তাহ মিলাইয়া বাঙালীর যে অন্তরঙ্গ পরিচয়টি ফুটিয়া উঠে, তাহাই বুঝিয়া লইতে হইবে। তথাপি মনে হয়, বহুজাতির রক্ত-মিশ্রণের ফলে বাঙালীর চরিত্রে একটা অস্থিরতা আছে ; অতিশয় বিভিন্ন ও বিচিত্র প্রকৃতির বহুবিরোধী সংস্কার একত্র হওয়ায় তাহার স্বভাব—চারিত্র্যের একনিষ্ঠা অপেক্ষা, আত্মহারা ভাববিলাসের অমুকুল। এই ভাবজীবনের স্ফূৰ্ত্তিতে সে প্রথম প্রচণ্ড বাধা পাইয়াছে মুসলমান-অধিকার কালে। মুসলমান ধৰ্ম্মের মধ্য দিয়া যে রুক্ষ কঠিন সেমিটিক কালচারের সঙ্গে তাহার প্রাণমনের সংঘর্ষ ঘটিল, তাহাতে তাহার প্রথম স্বপ্নভঙ্গ হইল। সমাজে ধৰ্ম্মজীবনে, বা ভাব-সাধনায় সে এই নৃতনের সঙ্গে কোনও দিক দিয়া আত্মীয়তা স্থাপন করিতে পারে নাই—তাহা এতই পৃথক, এতই অনাত্মীয়। মুসলমান সমাজের সংঘবদ্ধতা, সে ধৰ্ম্মের অতিশয় বাস্তব ব্যবহারিক আদর্শ—ভাব ও কল্পনার