পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (দ্বিতীয় খণ্ড) - গিরীন্দ্রকুমার সেন.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRR বিবিধ প্রবন্ধ । অধিক মূল্যের আহারীয় বস্তু অকারণ ভোগ করিলে যে পরিমাণে ধননাশ হয়, সেই অনুপাতে শরীরে বলাধান হয় না । আহার বিশেষের যে ভিন্ন ভিন্ন গুণ আছে, এ কথা অবশ্য সকলেরই স্বীকাৰ্য্য ; কিন্তু অল্প মূল্যের আহাৰ্য্য দ্রব্য হইতে যদি কতক পরিমাণে সে গুণ না পাওয়া যায়, তাহা হইলে প্রয়োজন মত অধিক মূল্যের আহাৰ্য্য দ্রব্যের ভোগে দোষ নাই। অকারণ সৰ্ব্বদাই অধিক মূল্যের খাদ্য দ্রব্য ভোগে ধননাশ হয়, এ কথা অনেকেই স্বীকার করিবেন । শুনা যায় সে কালের নবাবের বহুমূল্যের মুক্তা পুড়াইয়া চুণ করিয়া পানের সঙ্গে খাইতেন ; শামুক-পোড়া চুণ হইতে এ কাৰ্য্য সম্যকরূপে সুসিদ্ধ হইতে পারিত ; তাহাতে স্বাদের বোধ হয়। কিছুই তারতম্য হইত না এবং উহার ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ও মূল্যের অনুপাতে এমন কিছু দোষাবহ ও নহে। পেশীতে বল হইবে বলিয়া অধিক মূল্যের মাংস ভোজন করিলেও যে উপকার হয়, ঘুতপক্ক ডাইল খাইলেও সেই উপকার দর্শে । এদেশের কুস্তীগীর পালোয়ান বা সিপাহীদের অপেক্ষা ইয়ুরোপীয় সৈনিকদের শারীর বল অধিক নহে। অতএব বিশিষ্ট কারণ না থাকিলে কেবল অনুকরণের খাতিরে বলাধানের নিমিত্তে এদেশীয়দের মাংসভোজনে অকারণ ধননাশ হয়, কিন্তু ডাল খাইলে তাহ হয় না । এদেশের ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতগণ মস্তিষ্ক-চালনায় কোন দেশেরই পণ্ডিত অপেক্ষা হীন ছিলেন না । তাহার উপর তাহদের শরীরে বলও যথেষ্ট ছিল, কারণ অনেক সময় রেলের অভাবে তাহারা বহুদূর পদব্রজে গিয়া বিদায় লইয়া আসিতেন । কিন্তু তাহদের আহারীয় সামগ্রী কি ছিল ? —আতপ তাণ্ডুল, হৈয়ঙ্গবীন, মটর ডাল সিদ্ধ, নিরামিষব্যঞ্জন, দুগ্ধ, মিষ্টান্ন ইত্যাদি। এখনকার অধ্যয়নশীল ব্যক্তি যে মূল্যের খাদ্য সামগ্ৰী ভোগ করে, তদনুপাতে তাহাকে পূর্বের সেই পণ্ডিতগণের অপেক্ষা অধিক বিদ্যা উপাৰ্জন বা অধিক কায়িক পরিশ্রম করিতে দেখা যায় না ।