পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (দ্বিতীয় খণ্ড) - গিরীন্দ্রকুমার সেন.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত্র-বল । rq করিয়া থাকে । তখন সহসা পদস্থলীন হওয়াতে মানব সন্মান সম্রামের উচ্চ চুড়া হইতে নিন্দার নিয়নিখাতে নিপতিত হয় ; তখন অনুতাপ ভিন্ন তাহার সান্ত্ৰনার অন্য কিছু সামগ্রী অবশিষ্ট দেখা যায় না। অতএব সুখ, দুঃখ, সম্পদ বিপদ,-সকল অবস্থাতেই চরিত্র অটুট রাখিতে হইবে। নিৰ্ম্মল চরিত্র সংসারের বিজয়-মুকুট । জগতে জয়শ্ৰী লাভ করিতে হইলে পাত্ৰমাত্রেরই ইহা উপযুক্ত আভরণ। ইহ সংসারে জীবনসংগ্রামে প্ৰবৃত্ত ব্যক্তির পথে শত শত বাধাবিপত্তি উদ্যত রহিয়াছে। সেই সকল বাধাবিপত্তি লাজঘন করিয়া সঙ্কল্পের পথে অগ্রসর হইতে হইবে। শোকদুঃখের দারুণ আঘাতে হৃদয় যখন অবসন্ন হইয়া পড়ে ; সেই অবসাদ দূর করিয়া আমাদের প্রাণ নবীন উৎসাহে উদ্দীপিত করিতে হইলে চরিত্র-বলই প্ৰধান সহায়। দৈর্বের দোহাই দিয়া অবস্থার বশীভূত হওয়া কাপুরুষের কৰ্ম্ম । যাহারা সহজেই অবস্থাস্রোতে গা ঢালিয়া দেয়, তাহারা জীবন-সংগ্রামের সামান্য প্রখরতায় অধীর হইয়া পড়ে এবং নিজের নানাবিষয়ে ক্ষতি হইলেও সাধ্যমত তাহার প্রতিকার করিতে সাহসী হয় না। সামান্ত গার্হস্থ্যজীবনে কখন কখন এরূপ দেখা যায় যে, কোন কোন ভদ্রব্যক্তি ভৃত্যাদির অভাবে একেবারে অধীর হইয়া পড়েন। সামর্থ্য থাকিলেও গৃহস্বামী স্ত্রীপুত্র প্রভৃতি পরস্পরের সাহায্যে কাৰ্য্য সম্পন্ন করিতে চেষ্টা করেন না। কেহ বা শনির দশা পড়িয়াছে বলিয়া ভাগ্যের করে অবিচারিত চিত্তে আত্মসমৰ্পণ করিয়া থাকেন । কিন্তু চরিত্র-বিলসম্পন্ন ব্যক্তির মন এত সঙ্কীর্ণ নহে। স্বীয় কৰ্ত্তব্যের সমাধানে বা প্ৰয়োজন-সাধনে তিনি সমাজকে ভয় করেন। না । বঙ্কিমবাবু কপালকুণ্ডলায় লিখিয়াছেন, “নবকুমার জানিতেন না। যে, বাঙ্গালী অবস্থার বশীভুত, অবস্থা বাঙ্গালীর বশীভূত নহে।” বাস্তবিক কি সমাজে, কি ব্যবসায়ে, কি গার্হস্থ্য জীবনে সকল সময়েই অবস্থাকে আয়ত্ত করিতে হইবে। এ বিষয়ে চরিত্র-বলই প্রধানতম অবলম্বন।