পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামীগর্বে অনঙ্গ-বৌয়ের মুখ উজ্জল হয়ে উঠলো। সে আদরের সুরে বললে-এখন নেয়ে নাও দিকি ? বেলা তেতািপ্লর হয়েচে । সেই কখন বেরিয়েচ-দুটাে ছোলা-গুড় মুখে দিয়ে নাও-এধুনি তোমার ছাত্তরের দল আসতে শুরু করবে। তেল দিই নদীতে স্নান সেরে এসে জলখাবার অর্থাৎ ছোলা ভিজে ও এক টুকরো আখের পাটালি খেতে খেতে গঙ্গাচরণের মুখ তৃপ্তিতে ভরে উঠলো। অনঙ্গ জিজ্ঞেস করলে-হঁ্যা গা, পাঠশালা খোলার কথা কিছু হলো বিশ্বাস মশায়ের সঙ্গে ? --সব হয়ে যাবে। ওঁরা নিজেরা ঘর বেঁধে দেবেন বললেন--ছেলে হবে কি রকম ? -দুটো গায়ের ছেলেমেয়ে পাচ্চি-তা’ছাড়া প্ৰাইবিট পড়ার ছাত্তর তো আছেই হাতে। এ দিগরে লেখাপড়া জানা লোক কোথায় পাবে ওরা ? সকলের এখন চেষ্টা দাড়িয়েছে যাতে আমি থাকি । -সে তো ভালই। উড়ে উড়ে বেড়িয়ে কি করবে-এখানেই থাকা যাক। আমার বড় পছন্দ হয়েচে । কোন জিনিসের অভাব নেই। মুখের কথা খসতে যা দেরি --রও, সব দিক থেকে বেঁধে ফেলতে হবে ব্যাটাব্দের । চাষা গা, জিনিস বলো, পত্তর বলে, ডাল বলো, মূলো বেগুন বলে-কোনো জিনিসের অভাব হবে না। এ গায়ে পুরুতি নেই, ওবা বলেচে, চক্কত্তি মশাই আমাদের লক্ষ্মীপুজো, ‘ মনসাপুজোটাও কেন আপনি করুন না ? -সে বাপু আমার মত নেই। -কেন-কেন ? —কােপালীদের পুরুতগরি করবে ? শুদুর-যাজক বামুন হ’লে লোকে বলবে কি ? -কে টের পাচ্ছে বলে ? এ অজ পাড়াগায়ে কে দেখতে আসচে ? --তুমিও যেমন ? -কিন্তু ঠাকুরপুজো জানো ? না জেনে পুজো-আচ্চা করা-ওসব কঁাচ - খেকো দেবতা, বডড ভয় হয়। ছেলেপিলে নিয়ে ঘর করা -অত ভয় করলে সংসার করা চলে না। পাঁজিতে আজকাল ষষ্ঠ পুজো, মহাকালপুজো সব লেখা থাকে-দেখে নিলেই হয় ।